Monday, August 31, 2009

ঘুনাক্ষরের কবিতা

মিলিয়ে দাও মাঠ মিলিয়ে দাও
আমি খেলবো, খেলার নামটি ঘোর!
জনাব বাতাস- কী আজ বলো চাও?
ঘোরের মধ্যে চলছে ম্যাটাডোর

এ-ঘোর কালে মিলিয়ে দাও পদ
উষ্ণপ্রধান বাক্য, বাহাদুরি
মিলিয়ে দাও নদীর মধ্যে মদ
স্তনে চোখ ফুঁকছে লুকোচুরি

আর মুদ্রা লিখতে পারি বলো?
মধ্যদিনের অমলধবল শিস্
ভেসে আসছে হালকা চপ্পলও
মিলিয়ে দাও বিশাল উনিশ-বিশ...

বিশালাক্ষীর ছুরিতে মিলাও পাঠ
ফিরিয়ে দিচ্ছি ছুটির নিমন্ত্রণ-
কয়লাফয়লা মিলিয়ে দিচ্ছে কাঠ
কাঠ মিলিয়ে দিচ্ছে সাধু, বন

ভ্রম আমার পাঠ মিলিয়ে দাও
সূর্যাস্তের রচনা লেখা দিনে
প্রশ্ন উঠছে বাঙলা কবিতাও
পাহারা দেয় রাত্রিকালীন ঋণে-

পাহারা করে প্রহরান্তের ছবি?
অবাক করা আলুকভুলুক চোখ;
ভাবালুতার তীর্থে বসে কবি
কমলা খায়? না খোসার কুহক?

তাতে বেরিয়ে পড়ে সত্য, যা দেহ
সত্য দেখেই উদ্ধত হয় খুনি!
যা মিলেছে, ঝিলে, বকের স্নেহ
হঠাৎ শহর শিখব না এক্ষুণি

গ্যাস-বিদ্যুৎ রঙিন জটিলতা
ওয়াসা-ডেসার জলবাহানাও মেনে
নদীশিল্পের সম্ভাবনার কথা
ভেসে যাচ্ছে সেনসেশনের ড্রেনে

তার মধ্যেও যত মৃত্যু, ধ্বনি
কাব্যভাষায় তুলে আনতে গিয়ে
পাড়ায় পাড়ায় শিশ্ন এবং যোনি
বিয়ে করছে টোপর মাথায় দিয়ে

মিলিয়ে দাও মনস্কাম, ও সাঁই
আখড়াপ্রধান বাক্যে মিলাও ঘোর
বাতাস যদি বসন্তে গান গায়
সঙ্গত তাই সাধুর শিষ্য চোর...

নিদ্রা বিভঙ্গের মুদ্রা

সে অনেকদিন; একাধিক রাত্রি নিয়ে ফেরিঅলা
পবনে রাখিয়া গেছে অভিসন্ধি, পরাক্সমুখ গলা।
নহ নহ নভোস্বপ্ন, লোকিক জানালা-দরোজায়
তখন চোত্তির মাস, অলৌকিক মেঘবরষায়
এত বেশি নিদ্রা এসেছিল, এত বেশি অ্যালিগড়ি?
শহরে রথের মেলা: ফেরিঅলা মুদ্রা চায়, পরী

ফলে, ঘর থেকে বেরুলেই বিভ্রমের সা-রে-গা-মা...
ঘরের বাইরে বরঙ গেয়েছি গৃহরাত্রিনামা!
তাতেই বাগর্থ মিলিয়ে গেছে বাষ্পচক্রে, বাগান্তরে
ফেরিঅলা মুদ্রা-মায়া খুঁজে মরে ফুসকা-শহরে

তো অনেকদিন, একাধিক মুদ্রা নিয়ে ঘুরে ঘুরে
যখন দেখেছি নিদ্রা, সে বিড়াল, পরীর আদুরে-
বিভঙ্গ মুরারী, তখন চোত্তির মাস, অলৌকিকে
একমাত্র ফেরিঅলা সব রাত্রি নিয়েছিলে ঠিকে?

জোছনাকালীন মরুশিল্প

মহীনের ঘোড়াগুলি মারা গেছে বহুদিন পরে
গহীনের পাড়াগুলি ভেঙে গেছে অরে অরে
কিন্তু তার গুপ্তকথা ঘোরে-ফেরে শাদা পোশাকের
দৃশ্যের ফাঁকে অবলা জোছনায়, কোমল প্রান্তরে

আমাদের অশ্রুগুলি উড়ে গেছে বঁধূবালুচরে
ত্রেগুলি পুড়ে গেছে ব্যক্তিগত-রতি-বৈশ্বানরে!
আমরা নিভেছি বলে কেরোসিন লণ্ঠনের আলোয়
বিশ্বায়নের অমলধবল ইউরো মুদ্রা ঝরে

গার্হস্থ্যের পূণ্যগুলি পলাতক, ফেরেনি তো ঘরে
শূন্যগুলি আমাদের আরিক প্রভাবিত করে।
আমরা শুনেছি আজও মহীনের মৃত্যু নাই
গহীনের তগুলি ঝরে পড়ে গানের মর্মরে-

সেই গানগুলি আর শোনাতেও চাই বলে লিখি
জোছনা লিখেছিমাত্র- বুকভরা মাঠ, ঝিকিমিকি

Sunday, August 30, 2009

সংকীর্তন

সহজ কবিতাশিক্ষা হাতে করে দাঁড়িয়েছি কঠিন সভায়

এক-অঞ্জলি নদীজল তুলে তাকে নদীই বলেছি
বলেছি সহজশর্তে চাই ঋণ:
        এই মাঠ, বনান্ত আকাশ... মৌলিক বিস্তৃতি!
কোথাও বেড়াতে গেলেই, বন্ধুদের মধ্যে আমি বলেছি-
এসব আমার আগেই দেখা, আমার শিরায়
                কয়েকজনের স্মৃতি

স্মৃতিগ্রাহী গানগুলো, আজ আবার জেগে উঠছে, উঠুক।
আজ আবার ইচ্ছে করছে- বাঁশবাগানের পাশেই পুঁতে আমি
        এই কাব্যভাষা; একে কঙ্কালের অভিব্যক্তি বলে
খুব সহজেই মেনে নেবে দরিদ্র কাশবন!
শুনতে পাচ্ছি, মা বলেন-
    ‘জটিল জন্মের পাশে তুই কিন্তু সহজ থাকিস
সহজে ভিক্ষে মিলবে, ভিক্ষে করে তুই হবি ভিক্ষেশ্বর...’

ওরে আউলা-ঝাউলা দিন, ভাবছি বাতাসের সঙ্গেও কথা বলে জানব
কত কি ফুলের তথ্য, মধুবন্তী রোদ আর মোহন সাধুর হাসি
                কী অর্থ করে?
সভাতল কাঁপিতেছে কঠিনের জ্বরে!

যদি, ভিক্ষুর সারল্যে আঁকা এই পদ,
একে সহজেই জড়িয়ে নেবে ধ্যানস্থ পাহাড়
            শিখরে শিখরে

আপনি বলতে পারেন

আমাদের কোনও কথাই হয়নি কিন্তু পাড় ভেঙে যাচ্ছে। আমরা ভাঙনশিল্পের নামে বারবার ঘরবাড়ি ভেঙে, নদী থেকে আর একটু দূরে গিয়ে সংসার সাজাচ্ছি। এই হচ্ছে গমনশীলতা। সম্ভবত আমরা কোথাও যাচ্ছি

যাচ্ছি কিন্তু যাচ্ছি নে, এমন সন্দেহ আছে আজও কয়েকজনের। তাদেরই একজন মাঝে মাঝে বলে: ‘ওহ গড, আমাকে পাথর থেকে মানুষ করে দাও...’ সে নাকি পাথর কেননা সে কাঁদতে পারে না। কেন পারে না, কেন সে পাথর- সে অনেক লম্বা কথা...। কিন্তু তারমধ্যে আমি ফেটে পড়বার প্রকল্প দেখেছি

আমাদের সঙ্গে কোনও আলাপই হয় না অথচ অনেক তরমুজ ফেটে যায়। ফেটে যায় স্থাপত্যিক মর্ম। আমরা, ফেটে যাওয়া দাগ থেকে একচিলতে শব্দ, টুকরো-ইট কুড়িয়ে নিয়ে, কবিতা সাজাই। এই হচ্ছে ভ্রমণশীলতা। এতে স্পষ্ট হয়, আমরা কোথাও থেকে আসছি

‘আসছি কিন্তু আসছি নে’ এমন ধারণামাত্রই আপনি বলতে পারেন, ঘূর্ণনশীলতাই প্রতিষ্ঠা পাচ্ছে। হয়তো তাই।

‘এই যে আজ আপনার সঙ্গে দেখা হয়ে গেলো’

কবুতর: লজ্জা: বিস্ময়

সেই কবুতর হারানো গল্পটা আমি আজও বলিনি।

হ্যাঁ, কয়েকটি কবুতর ঠিকই পাওয়া যাচ্ছিল না
আর আমার মনখারাপ লাগছিল।
আর আমি কবুতরের সন্ধানে গিয়ে
পাশের বাড়িতে খুঁজে-না-পেয়ে, পাশের বাড়িরও পাশের বাড়ি
                    চলে যাচ্ছিলাম
আর মনে মনে ভাবছিলাম:
        আমার কবুতর কেন হারিয়ে গেল?

তখন দুপুর, সে-দুপুর সম্ভাবনাময়, জলজ্যান্ত
গ্রীষ্মের শাসন মেনে, গৃহসম্ভব প্রতিবাদে
জেসমিন শুয়ে ছিল জেসমিনদের ঘরে; অভ্যন্তরে
ক্লাস সেভেনের অধিকারে আমি হারানো কবুতর খুঁজতে গিয়ে
                    দেখতে পাই:
পৃথিবীতে কবুতরই শেষকথা নয়!
কবুতর হারালে লজ্জা পাওয়া যায়, বিস্ময় পাওয়া যায়

পথের কবুতরবিক্রেতা, এই খাঁচাভর্তি কবুতর আমাকে দাও।
শহরে ওদের হারিয়ে ফেলে
দেখতে পাই, এখন আমি কোন ক্লাসে পড়ি?
জানতে চাই, আমার ভেতরে আর কতটুকু লজ্জা ও বিস্ময়
                    অবশিষ্ট আছে?

এই হচ্ছে কবুতর হারানো গল্প!
    এই পর্যন্ত লিখে
        কবির ভাষায় বলি:
হরিণীর নাভি থেকে শীতকাল উড়ে যায় গ্রীষ্মের দিকে

Saturday, August 29, 2009

বনপলাশের পদাবলি

শীত ছিল তো গত বছর- শীতের কথা বলি
হাতের মুঠোয় কুড়িয়েছিলাম ছোট্ট শহরতলি

শহরতলির স্মৃতি মানেই বাঁধিয়ে রাখা ছবি
এক বছরেই বুড়ো হলাম- আজ শহরের কবি

কবির কথা? কথা তো নয়, মৌনব্রত বাড়ি
জায়নামাজে চেয়েছিলাম একটি নিভাঁজ শাড়ি

শাড়ি মানেই স্বপ্ন এবং অসম্ভবের দাবি
কে বলল যে অশ্রুপাতে সমুদ্দুরও পাবি?

যা পেয়েছি শহরতলির লুব্ধ অভিসারে
নিইনি কিছুই তবু ঋণের স্নিগ্ধ বোঝা বাড়ে

শীত ছিল তো গত বছর- শীতের কথা ভুলে
এবার শহর জড়িয়ে নেব যথার্থ আঙুলে

বনস্পতি, বদলে যাব, মন্দ বলুক লোকে
বনপলাশের পদাবলি আয় শেখাব তোকে

দর্জি ও পোশাকের গল্প

আজ যে পোশাকে আপনি নিউমার্কেট এসছেন
        তার দর্জি কে? তাকে মনে পড়ে?

অবশ্য আজ এত গরম যে আপনার সঙ্গে আপনার
পোশাকও ভিজে যাচ্ছে আর আমাদের চোখে পড়ে যাচ্ছে-
            অভেজা জীবনে ভেজা কাপড়ের চরিত্র।

কিন্তু, একথা তো ঠিক, ওই দর্জিকে আপনার জানা হলো না।
যদিওবা দর্জিই কতটুকু জানে-
তারা তৈরি পোশাক কখন কিভাবে
        কতখানি ভিজে থাকে?

আজ বৃষ্টিও হলো! অনিচ্ছাসত্ত্বেও আপনি আরও ভিজলেন!
এখন, ভিজতে ভিজতে হঠাৎ যদি সেই দর্জিও চলে আসে
নিশ্চয়ই তাকে জিগাবেন না- ভেজা পোশাক কেন এত জাপটে ধরতে চায়?
অবশ্য দর্জিও জানবে না, পোশাকি মানুষ কি চান?
            পোশাক নিজেই কি দেয় বা নিতে চায়?

কিন্তু আপনি ভিজে গেলেন- ঘামে ও বৃষ্টিতে।

তবে সর্দি লাগার ভয়ে, তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরে
আপনি কি করবেন তাও আমরা জানি:
প্রথমে ভেজা কাপড় খুলে, তারপর শুকনো পোশাক পরবেন

সেই নতুন পোশাকের দর্জি কে? তাকে মনে পড়ে?
সেও কি আপনার দৈর্ঘ-প্রস্থ মনে রাখেনি,
        আমরাও মনে রাখতে পারিনি সব যন্ত্রণা
বা ফিরে আসবার পথের সংলাপ, একা একা

মন্দাক্রান্তার কবিতা

মন্দাক্রান্তার কবিতা শুনতে দাঁড়িয়ে, ভুবন বলল:
    ‘দ্যাখো আমরা কোথায় এসে পড়েছি!’

সত্যিই তো! কোথায় আসতে গিয়ে, কোথায় এসেছি আমরা?
কেননা দেখতে পাচ্ছি-
মন্দা একটি দিঘির ঘাটে বসে, শান-শ্যাওলায়
            কবিতা পড়ছে
আর কবিতাগুলি হাঁস হয়ে ভেসে যাচ্ছে জলে...

‘ভুবন শোন, মন্দার ভিতরে তো কবিতা আছে
        মন্দা, কবিতা পাড়ায় চলে’

অবশ্য সেই কবিতারা, হাঁস হয়ে জলে ভেসে যায়
দিনশেষে সন্ধ্যায়, ঘরে ফিরে মন্দা দ্যাখে-
ভালো লাগছে না... যেহেতু বিশেষ বয়সে
কোনও কোনও হাঁস হয়তো ঘরেই ফেরে না

ফেরে না কবিতার হাঁস...?

শেষ কবিতাটি মন্দা যখন পড়ছিল, মনে হলো:
মেয়েটি সন্ধ্যায় ঘরে না ফেরা হাঁসকে ডাকছে-
        আয় আয় চই চই, আয়
তুই না এলে, শোন, আমি কিন্তু পালক খুলে ফেলব
            রাতে, বিছানায়

মন্দার অবাধ্য ডাকে, কথোপকথনের ফাঁকে, আমি ও ভুবন
            এখনও সন্ধ্যায়
                যে কোনও দিঘির পাড়ে
                    কবিতা শুনতে দাঁড়াই

প্রতিষ্ঠান

ব্যক্তিকে বাড়িয়ে দাও তুমি এমনই প্রতিষ্ঠান

তোমার গোপনে যে গভীর জলাশয় দেখে
আমি বসে থাকি মৎস্যশিকারির সম্ভাবনায়
        মাছমন আরাধ্যের দিনে;

জাঁহাছে আঙুলগুচ্ছ, তোমার আঙুলে লেখা
রাত্রিকালীন তারাদের গল্প! গল্পপাঠ
দীর্ঘ দূরত্ব ডিঙিয়ে আমি মহাকাশ চর্চা করি

চর্চা করি বনতরুদের গান

এদিকে, আমাদের যশোপ্রার্থী তরুণ বাতাসে
            যা যা উড়ে যায়
তুমি সব কুড়িয়ে কুড়িয়ে
        কার্পাস রচনা কর!
কবিতার ধর্ম মেনে, উড্ডয়নে
        তুমি গভীর প্রতিষ্ঠান

উল্লেখ্য, ব্যক্তিত্ব বিকাশে আমি
মাছমন, মহাকাশ, তরুমর্ম জড়িয়েছি আজ চোখে;
যে কারণে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা আমাকে মানায় না

কবিতার মর্ম মেনে, উড্ডয়নে, তোমাকে বলেছি উদিত কবির
                    দগ্ধ-বিহঙ্গপনা

তুমি তখনই প্রতিষ্ঠান

Friday, August 28, 2009

চৈত্রক্রান্তি

অনন্ত চৈত্রের দিন, তুই ভালো থাক!
তুই শিখেছিস শোষণ

কিন্তু জানি আক্ষরিক
এই মাটি-কামড়ে পড়ে থাকার ছবি-
মাটি-কামড়ে পড়ে থাকাই
        যথাহরিৎ কবি!

চৈত্রে, গাছটি তো ভাই পড়ে রইলো
            ঝরা সইল
বাক্য যেমন ঝরতে ঝরতে
        ঝরাপাতা!

কাব্য লিখব? কইরে আমার
        স্বপ্নমণি... শাদা খাতা?
        শা দা  হা ও য়া র  খা তা

খাতা কি আজ পাতার সঙ্গে
        শিখেছে উড্ডিন?
তুই ভালো থাক দীর্ঘশোষণ, মুগ্ধপোষণ
        চৈত্রময়ীর দিন।

ইচ্ছা মসীহ

এখনই একটা জাহাজ আসবে, জাহাজে আসবে গল্প।
সেই গল্পের শেষটা কিন্তু শেষ না করেই শেষ!
শেষে এক নদী, তার তীরে নৌকা ভেড়াবার কিছু পূর্বেই
হঠাৎ ‘ঝপাৎ’। দেখি, ঝপাতের সঙ্গে আমি ভেসে যাচ্ছি জলে

সে জলে ভাসতে ভাসতে শেষে, ভেসে গিয়ে এক দ্বীপে
দেখেছি, ইচ্ছা কখনো পুরুষালী নয়, ইচ্ছা এমনই-
কেননা আমার অনেক মৃত্যু কাম্য ছিল না মোটেই!
কেননা আমাকে উড়তে হয়েছে আগুনের শিখা ছুঁয়ে!
কেন যে আমার ওপারে যাবার সাঁকোটাই ছিল ভাঙা!
কেন যে আমাকে শাদাপৃষ্ঠায় লিখতে হয়েছে নাম!
কেন যে আমাকে ঘামতে হয়েছে ঘুমোবার আগে একা!

সেই দ্বীপে বহু পাখি আছে, সালিম আলি কিছুই জানে না।
সেই দ্বীপে বহু রোদ আছে, যাকে পটে কেউ-ই আঁকেনি।
সেই দ্বীপে বহু রাত আছে, রাতের মর্মার্থ নিয়ে সংশয়াচ্ছন্ন কবি।
তো, সে দ্বীপে আমার দ্বীপান্তর হলে, আমি জাহাজি-প্রতীক্ষা করি:

যত যত যত চক্রব্যাধ, এতটাই অবাধ যে দেখতে না-দেখতেই
আমিভর্তি স্মারক আমার রজনীলিপির মধ্যে ঢুকে পড়ে।
যদিও, আমিও গান করেছি যদিও আমি রয়েছি জনান্তিকে
অজস্রএক টোকন ঠাকুর আমি শুধু যাই লিখে

আজ জাহাজি গল্প, সেই দ্বীপ, দিনরজনীর লিপিময় কথা, এসব কেন?

তোমার ইচ্ছা। তুমি হয়তো এমনি-এমনিই ইচ্ছা করেছিলে

আর আমায় উড়তে হয়েছে ঘুরতে হয়েছে মৃত্যু হয়েছে অনেক,
আর আমায় আপন অশ্রু হাতের তালু উল্টে মুছে
খুঁজতে হয়েছে ভিড়ের মধ্যে কোনটা প্রকৃত আমি?
        আমি তো অনেক
অথচ, তোমার ইচ্ছায় তুমি হয়তো তোমার মতোন একচ্ছত্র, একক?

সুন্দরীসম্ভবা পদাবলি

কোথায় নিয়ে এলে সুন্দরী?
সমুদ্রের নামে এক নব্য-মরুভূমি;
        যেখানে পিপাসা দীর্ঘ
            আমি মরি মরি!
ভ্রমণযাত্রায় ভুল? এখন কি করি?
শুনেছি আমার ভূমিষ্ঠ-রঙিন ভোরে
        বাতাসেরও অগোচরে
আমাকে প্রথম ডেকেছিল এক
        আবাবিল শিশুপরী!
পরীর বাচ্চা রেখে গিয়েছিল
            কালের নৌকা, তরী-
জলভ্রমণের ইচ্ছে বইছে
        সেই থেকে কবরাবরই।
কিন্তু আমার চারিত্র্য বোঝেনি
অভিভাবকের দল,
কণা বলতে, বালি বুঝিয়েছে
        কেউ বোঝায়নি জল-
ফলে এক আপাত-হরিণী
        একদিন বলল, ‘চল...’
চলতে গিয়েই
    দেখেছি সে সুন্দরী
সুন্দরী সেই পরীর বাচ্চা পরী
তবে, পরীর সঙ্গে
        কোথায় এলাম?
সমুদ্রের গল্পে পড়ছি কি শুধু
        বালিপৃষ্ঠার শিরোনাম?
এক্ষণে পিপাসা দীর্ঘ
        আমি মরি মরি!
সৌন্দর্যদীক্ষায় ভুল? এখন কি করি?
এই মরুবিদ্যালয়ে, কবিজীবনের ক্লাসে
            চিরকালীন শিক্ষয়িত্রী
                মরীচিকা সুন্দরী
তব, অধরা কিভাবে ধরি?

শুধু গান

যুদ্ধে মহত্ব থাকে? পরে টের পাই!
আমরা পড়েছি ওয়ার এন্ড পিস... আমরা
        ঘুরেছি গুয়ের্নিকায়

আহা, হা হা হাংরি কবিতাগুলো
বা দেশে দেশে চিত্রকলা, আর
        দুর্দান্ত ফিল্ম-টিল্ম, হাউ স্ট্রেঞ্জ
যুদ্ধের পরেই কিন্তু যুদ্ধ বোঝা যায়

তবু শান্তি শান্তি বলে ঘুমিয়ে পড়েছে
            যথামৃত গান;
গান আমাদের বোন, গান আমাদের ভাই
        যুদ্ধশেষে, এই সন্ধ্যায়
যতগান হারিয়েছি, ধরে ধরে
    সব লেখা যায়? না-সব
        লেখা হবে কোনও কালে?

এই তো আবার তুমি যুদ্ধে জড়ালে!

আমার ভ্রমণ আমার আয়না

আমি যেতে যেতে বলব, কী জানি আজ কার
            শুভদিন, শুভদিন!
কিছুটা পাথুরে পথ, তারপরও ভাবব
প্রতিদৃশ্যে আমি আরও হেরে যাচ্ছি, খেলাপ করছি ঋণ!

আমি যেতে যেতে... এই যেতে যেতে মানে কি?
গ্রামান্তের আবছা-রেখায় সন্ধ্যেটা কখন বসেছে!
আমি একে এড়িয়ে যাব? তক্ষণই তো
আমার মধ্যে বিবাহবার্তা এসে পৌঁছেছে...

বর হয়ে যাই মনে মনে আমি বউ দেখতে পাই
আমার বউ তো? তাই তীব্র ভাঁটফুল পছন্দ করবে, সেটাই
                    চেয়েছি, তাই না?
হ্যাঁ, খুব রাতের গন্ধ পাচ্ছি, ঝাঁঝাল রাত!
আসলে এই রাতটাই না-আমার উত্তরাধিকারে পাওয়া আয়না।

অথচ আমার মেয়ে জন্মাবার পরই একদিন আয়নাটি
            ভেঙে ফেলবে ভেবে
যেতে যেতে আমি
নির্জন নদীকেও একবার বলব:
    নদী, তুমি আয়নাটি নেবে?

বস্তুত

ইচ্ছেমতো ছুঁতে পারি, ফুল
        বাগানের
কেউ ফুটেছে টবে, কেউ
এই তো সেদিনই
    ফুটেছে মাত্র!

তবু সমুদ্রের
    ঢেউ
        হয়ে উঠলেই
আমি ছোঁব, তাতেই
    আভিজাত্য
        আর অহংকার
ফুটবে, লাভ হবে
    বাঙলা কবিতার

দায়িত্বশীলতার প্রশ্ন

ঠুনকো বাতাস এসে, যত কাণ্ড বাঁধিয়ে গেল
আমি তো বসেই ছিলাম

প্রথমে ভাঙল ঘর, ঘরে সেই গুপ্তভাষা
ইতিহাসে অনাশ্রিত চিঠি
        উদ্বৃতিহীন পুরনো বিকেল

আর কিছু অযাচিত রাত, রাত্রি বলছে-
আমাদের ভিতরে যে অন্ধকার থাকে; তাই-ই হয়তো
            ফিরে আসে প্রতিটি সূর্যাস্তে!

এবেলা ঠুনকো বাতাস
    প্রকাশ্যে জানিয়ে গেল-
ঝড়-হিসেব কাল আসব, তোকে
        হ্যাচকা উড়িয়ে নিয়ে
            ফেলে আসব শ্রীমতী পরিত্যাক্তার পাশে;
দেখি তার নৈশঘুম
        ভাঙাতে পারিস কিনা?

Thursday, August 27, 2009

কথাবার্তা বিষয়ক

আমি এত কথা বলি, স্বঘোষিত বার্তা বলি... লিখি!
হুম, তোমাদের বুকের ভেতরে শুধু ব্যাকরণ, তাই
একে বলো বাচালতা! তবে, বলো অতিরিক্ত কি কি
আমি বলি আর লিখি আর রুমাল উড়িয়ে যাই?

শহরে, বন্ধুরা জানে আমি কোন বনে বাস করি?
আমি কোন নদীতীরে আজ ভোরে শৌচ করেছি?
ভুলোবনে জন্ম নিয়ে তুলোবনে উড়ে উড়ে ধুলোবনে
ফিরে এসে একদিন, ফুলওবনে কিভাবে মরেছি?

একদিন অনুভূতি বলে এক ভিলা ছিল, ভেলা ছিল!
ভিলার সিঁড়িতে ছিল ভাব, ভেলা সেই ভাব নিয়ে
ভেসে গেছে জলোচ্ছ্বাসে... সেইদিনও অবহেলা ছিল...
আজ যদি তাই লিখি, তাই বলি রুমাল উড়িয়ে?

একে বলো বাচালতা, এরকমই শিখেছ ব্যাকরণে?
আমি তো যাবই আজ সন্ধ্যায়, নীলক্ষেতে... কথাবনে

শীতল কবিতা

ঘন বরফের স্মৃতি, দুভাবে পেয়েছি!

একবার বালকবেলায়, আর
আর একবার, তখন-
যখন, সমস্ত আগুন জড়িয়ে, দেহাস্ত্র উঁচিয়ে ধরেও
আক্রমণ ভুলে গিয়ে আমি মুগ্ধতার সঙ্গেই
        করে ফেলি মরমী আপোস

সে আপোসে পরাজয় ছিল?

শখ করে ইগলু খেতে গিয়ে, আজ আবার মনে পড়লো
ভেতরে আগুন রেখেও, বাইরে বেশ ঠাণ্ডা
আমি কি সেই বরফ হয়ে থাকছি?

অগ্নিহোত্রী, আবার কি যুদ্ধে-তীর্ণ রাত্রি আসবে না?

Wednesday, August 26, 2009

সাকরাইন

ঘুড়ি উড়ছে! ঘুড়ি উড়ছে আমাদের চিন্তার
ঘুড়ি ওড়াচ্ছেন আমার বন্ধুরা
ঘুড়ি ওড়াচ্ছি আমি

আমাদের ঘুড়িকাল... কি রে, দেখতে দেখতে যে
            আকাশের দিকে উঠে যাচ্ছে?
আমাদের চিন্তার সঙ্গে চাঁদ-তারা কি টক্কর খাবে?

চিন্তারা জট পাকিয়ে পাক খেয়ে পড়ছে!
একটি ঘুড়ি আরেকটি ঘুড়িকে পেচিয়ে ধরে
            কেটে দিতে চাইছে
ঘুড়ি-সংস্কৃতির স্বর্ণযুগ আর শেষই হচ্ছে না...?

আবার এর মধ্যেই কোনও ঘুড়িটা আরও নির্জন হতে গিয়ে
আকাশের আরও আকাশে উঠতে গিয়ে
    কি জানি কি নক্ষত্র হতে চাইছে!
কিন্তু এই সাধ তো পূর্ণ হবার নয়; কেননা মেঘ সম্পর্কে যারা
মাইল মাইল ধারণা রাখে, তারাই বলেছে:
মেঘ মহা চিন্তাখোর, রূপান্তরশীল ভিলেন! তার আস্তানা ভেদ করতে গিয়ে
ধরা খেয়ে পড়ে আছে কতজনই
            ঘুড়ির কংকাল

আজ তবু ঘুড়ি ওড়াবার দিন, আজ ঘুড়ি উড়ছে
                আমাদের চিন্তার