Friday, September 18, 2009

কবিতা কুটিরশিল্প

টোকন ঠাকুর
প্রথম প্রকাশ
ফাল্গুন ১৪০৭, ফেব্রুয়ারি ২০০১
স্বত্ত: বর্ষা বিভাবরী
প্রচ্ছদ
ধ্রুব এষ
অক্ষরবিন্যাস
মিজানুর রহমান
প্রকাশক
শ্রাবণ প্রকাশনী
১৩২ আজিজ সুপার মার্কেট (২য় তলা), শাহবাগ, ঢাকা
ফোন: ০১৮২১৪৫৫৭
মূল্য: ৬০ (ষাট) টাকা


ISBN: 984-813-023-3

অংশীদারিত্বের কথা উঠলে

আমার কবিতা যারা পড়েন, পছন্দ করেন, তাদেরই।

এবং তাদেরও, যারা পছন্দ করেন কী না জানাতে
অসমর্থ বাক্য ছুঁড়ে দেন, রুগ্ন আস্ফালন করেন,
অধিকন্তু ব্যবচ্ছেদ-বিলাসী হয়ে বাতাস কাটতে বসেন।

সেইহেতু মহান মাৎসর্য্য, অম্লকাতর অক্ষমতা
এবং লঘিষ্ট ধারণাবিদ্ধ তাদের চিন্তাযাপন দেখে
আমি তাকেও উপাত্ত মনে করি। ঔচিত্য কবিতা লিখে ফেলি।

সঙ্গত কৃতজ্ঞ হই!
অন্তত আমার কবিতা তাদের পড়তে হয়।

এবছর বনভূমি আরেকটু উজাড় হল, বস্তিও।
ইহা দেখে, বই পড়ে, বুঝতে শিখি, মানুষ ও গাছ
তার স্থিতক্ষেত্রে ক্রমশ শিকড় গজিয়ে রেখে
        শীর্ষে উঠতে চায়!
ফলে তারা ভালবাসার সঙ্গে বেদনাও ভালবাসে!

অশ্রুরা লুকিয়ে থাকে উৎসবের পাশে

ছুরিকবিতা

ছুরি, তীরের তীক্ষ্ণতা নিয়ে ছুটে গিয়েছিলে! তাতেই
ভুলতে ভুলতে, ভুলে যাচ্ছিলাম-
    কত তীর লক্ষভ্রষ্ট হয়!

আধা-লিপ্ত আধা-নির্লিপ্তির গানে গানে বলি:
    লক্ষভ্রষ্ট তীর তুমি আর ফিরে আসবে না?

রক্তিম ফলকে দেখে যথারীতি ক্ষুধা পেয়েছিল।

ক্ষুধাই তো ছুরি সেই লালিত ডাইনি, প্রেম
তীরের তীক্ষ্ণতা নিয়ে ছুটে গেছে দিকে দিকে
            আর ফিরবে না?

জল-বালুচর

অনেক কবিতা ছাপা হ’ল।
অনেক দুঃখও পেয়ে গেলো ধ্রুপদী মর্যাদা।
অনেক খ্যাতিও শেষে উপচে উপচে
            ফেনা হয়ে গেল

একটি কবিতা থেকে আরেকটি কবিতায়
        যেতে গিয়ে
মধ্যপাতে ফাঁকা দিয়ে
ডুকে পড়ল মধুবন্তী, নারীবন্ধু, গুপ্ত-নানাচ্ছল
এখন যে কবিতা লিখছি, কবিতার নাম
            ‘জল’
-এটি বালুচরে ছাপা হবে! ফলে
রৌদ্রে বখাটে হলেও, জোছনাকালীন দাহশিল্প
            মনে করে
যদি মরুবিশেষজ্ঞরা জেনে ফ্যালে-
আমার খ্যাতির সঙ্গে বেঁচে থাকছে
        মাইল মাইল অখ্যাতি
        আর না-ছাপা হাসি, গূঢ় বিফলতা?

আশংকা

বাবুই যে বৈষ্ণব-ঘরানার পাখি, এই তত্ত্ব, পরমার্থ অভিজ্ঞান
            আমি যথেষ্ট বুঝেছি
চড়ুইয়ের মতিচাঞ্চল্য, দেহস্ত সংরাগ

ভাল লাগছে ভরপুর ভাবনা-সন্দেশ

আমার মনে হয়, বাবুইবৃত্তির সঙ্গে আজ
চড়ুইবৃত্তির একটা টক্কর লাগছে

এদিকে আমি কবি হয়ে উঠছি

মা

মা ঘুমিয়ে পড়েছেন!
আর, আমি তার শিয়রে দাঁড়িয়ে আছি
        মুঠোভর্তি কবিতা নিয়ে;
আলোর ছোবলে এসে, ভোরবেলা মুছে দেবে
রাত্রি থেকে বিচ্ছুরিত অনাথ কাহিনী।
নিরাকার ভস্ম হয়ে পুড়ে যাবে সকল কবিতা

কিন্তু এই রাত্রিবেলা, বোস্তামিকে মনে করে
            আমি যদি দাঁড়িয়ে থাকি,
এভাবে কি জানা হবে- পিপাসায় আমার মা
            কি চেয়েছেন?
আমি কেন কবিতাই মুঠো ভরে আনতে পেরেছি?

তবে একথা সত্যি, আমি হয়ত অভাবিত কাটিয়েছি দিন;
পিপাসায় পানি আর কবিতাকে সদর্থক ভেবে
দ্বিতীয় ভুলের দিকে কবিময় সফলতা কুড়োতে গিয়েছি।
এছাড়া স্বীকার করছি- প্রথম ভুলের জন্যে
ভূমিষ্টকে দায়ী করে আমার মামলাগুলো
        এখনও খারিজ হয়ে যায়নি!
ফলে, আমার যে-বোন পালিয়ে গেছে
        তার জন্যে আধোগুপ্ত কান্নাজাগা রাতে
দেখেছি, অনেক কবিতাই চোখ ফেটে বেরিয়ে আসতে চায়;
যদিও, কবিতাজন্মের প্রথম শর্ত ‘শব্দ’... সেই শব্দই এড়িয়ে
নিঃশব্দ আমার মা; আমি আর পিপাসাকে
            বুঝতে পারিনি বলে
বাৎসল্যের চোখ থেকে ঝরে পড়া কবিতাও পরতে পারিনি

মা এখন ঘুমোচ্ছেন।
আর, আমি তার শিয়রে দাঁড়িয়ে আছি
        মেঘলিপ্ত সম্ভাবনা নিয়ে:
রাতের যে-কোনও প্রান্তে, ঘুম ভাঙলে,
আমার বিনিদ্র হাতের মুঠো খুলে, তাকে এই
        জলমর্ম কিভাবে জানাব?
যদিও সংশয় থাকে, মেঘমর্মে কবিতা না-কবিতার
    প্রবণতা জল হয়ে থাকে?

উল্লেখ্য আমার পিতা সন্ধে থেকে ঘরেই ফেরেননি; তিনি
গার্হস্থ্য-বনের দিকে, হাঁটতে হাঁটতে হাত নেড়ে ডাকছেন-
        জোনাকি... ও জোনাকি, ফিরে আয়

সেই যে আগুন আমাকে শিখিয়ে গ্যাছে, ছোটরা পালিয়ে গেলে
                রোদের ছোবলে পুড়ে
সন্ধ্যার অদূরে একা পৃথিবীর জোনাকি হয়ে যায়!

তাই, অন্ধকারে অঙ্কুরিত উড্ডিন যন্ত্রণা
যা আমাকে ভালবেসে উপচে দেয় বাক্য উপহার

আজ মা’র শিয়রে দাঁড়িয়ে, এই যে দেখছি ঘুম, আবার দেখব আলোয়
ভোরবেলা নিরাকার ভস্ম হয়ে পুড়ে যাচ্ছে
        মুঠোভর্তি আমার কবিতা

বিরাট ঘটনা

তখন, হোটেলে বসে, দুপুরের ভাত খেতে গিয়ে
ভালবাসা টেবিলের নিচে চলে যায়

ভালবাসা ভর করে পায়ে পায়ে
        গেরিলা ধারায়

হয়ত জোড়াজোড়া জানে- আঙুলের কৈবল্যকুসুম ফুটিয়ে
ভালবাসা বাতাস সেলাই করে

তখন, দুপুর নিভিয়ে দিয়ে
        বাল্যসন্ধ্যা ঝরে

যদিদং হৃদয়ং মম তদুস্ত তব; যদিবা
ভালবাসা হোটেলের ভাত, টেবিলের তলে তলে তুরীয়ং
            চুরিরং পায়ের প্রতিভা

ভাবীর মন পুলিশ পুলিশ

নিতান্ত পেটের দায়ে, আমার ভাই
        দারোগা হয়েছে।
ঘরে ফ্রিজ, টেলিভিশন-ডিশ
ডিশ দেখে বোকা বোকা দেবরটিও আজ
            অ্যাপ্রেন্টিস

গৃহের ভেতরে থেকেও, ভাবীর মন
        সারাক্ষণ পুলিশ পুলিশ

প্রত্যেকের ব্যক্তিগত নদী

হাঁসগুলিকে সরাসরি হাঁস না-বলাই ভাল।
লিখিত ইঙ্গিত রেখে কবিতাও বলা যায়।
আরও বলা যায়- আমি ইঙ্গিতবাদী মানুষ,
চেষ্টা করছি ঘোড়াগুলোকেও বিশেষ কিছু ভাবার।

তাই, জলঢেউয়ের বেআবব্রু বুক খুব ধরেছি
মনে পড়ছে অনেক কথা সব না বলাই শ্রেয়
যতই আমার দেহ বলি, দেহ কি আর দেহই?

আবার, কবিতাগুলো কি যথার্থ কবিতাই?
তাহলে কেন দিঘি দেখলেই লাফিয়ে পড়তে যায়?
ক’হাত দূরেই মধ্যরাতের সমুদ্র গর্জায়
ক্রোধের  ফেনা তীরের বালি কী চায় সঠিক জানি?

ব্লাউজগুলিকে শুধুমাত্র ব্লাউজ বাদেও বলব:
সতর্কতার ফাঁকে হঠাৎ অসতর্কের আগুন!
কিন্তু সে ঠিক আগুনও নয়, বাঘের চোখে যাদু
মোহিনী সংকেত পেয়ে, তাকে মৃত্যুই বলি যদি-
ব্যথাকে বলব জল, সেই জলই প্রত্যের ব্যক্তিগত নদী

স্বপ্নমন্ত্রীর বিদেশ গমন

স্বপ্নমন্ত্রী বিদেশ যাবার আগে, পুরনো এয়ারপোর্টে দাঁড়িয়ে
যয যা বললেন, অবশ্য আমরা যারা কাগজের লোক-
যে-যার মতো টুকে নিয়েছি

এখন রিপোর্ট লিখব, রাতে পেস্টিং, কালকেই ছাপা; দৈনিক সম্ভাবনায়

মন্ত্রীর ফিরতে দেরি হবে। কেননা মাননীয় মন্ত্রী স্বপ্নবাবু খুব অসুস্থ
দেশে তো তেমন সুটিকিৎসার ব্যবস্থাও রাখেননি

তাই তিনি বিদেশ যাচ্ছেন; তবু পুরনো এয়ারপোর্ট দাঁড়িয়ে
মন্ত্রী আর কি কি বললেন, আমরা সঠিক বুঝতে পারিনি
    তো সেই ‘কি কি’গুলো অবশ্য ছাপাও হবে না,
                    না-হোক

Thursday, September 17, 2009

মুদ্রণ-ট্র্যাজেডি

হ্যাঁ হ্যাঁ, শুনতে পাচ্ছি বনমোরগের গলা
পায়ের নিচে প্রশ্ন করছে পাতার মহিমা!
অরণ্য মিত্র, কেমন চলছে গাঢ় শিল্পকলা?
খবর জানে সুশীল সমাজ, ঘরের বউঝি’রা?

মরাপাতারা লো, তুই কি জানিস ফারাওঁ-পিরামিড?
মমি দেখলেই জিগ্যাচ্ছি: মমি তুমি কার?
রাজাবদল প্রজাবদল হাওয়াবদলবিদ
ঋতুবদল বদলে দিচ্ছে ঋতুর ব্যবহার...

ছন্দবদল? এই পদ্যে? কোথায় বদলানো?
এই একটু শীতের আভা, নাড়ার আগুন-মাঠে
আর সবই স্মৃতিনির্ভর, কাব্যে পড়া, মানো?
তৈলচিত্রের ভূচিত্রটা  দেয়ালে ঝোলে ফ্যাটে

ওটাই কিন্তু ঋতুর মমি, শালিক গেলেন ক্ষেপে
পদ্যগ্রন্থে হেমন্তকে কারা দিচ্ছেন ছেপে?

বাণী তীরন্তনী

সিদ্ধান্ত, সাঁকোর ওপরে বসে থাকে

সিদ্ধান্ত নেবার পর
    সেই সাঁকো ভেঙে যায়

ঘামের ঘটনা

এলো উৎসবের দিন। গ্রন্থের বাইরে এসে
প্রত্যেকটি কবিতাই উৎসর্গ হতে চায়

কিন্তু আমি কিভাবে তা করি?
            কাকে?

সরাসরি চাইলেই পারো, প্রিয় প্রিয় প্রিয়
    পৌরুষের ঘাম, ঘামের ঘটনা
            কবিতাকে!

অ আ

অ’বর্ণের সঙ্গে সর্বশেষ সাক্ষাৎ হয়েছিল সভয়-অরণ্যে।
আর তখনই আমি বুঝতে পারি
অ-এর মধ্যে অজগর ছাড়াও
    বাঘ, বাঘের ভয়
        হরিণ, হরিণীর নাভি
            এমনকি বাওয়ালিরাও বসবাস করছে

আমি অরণ্য থেকে ফিরে, শহরে এসে দেখি
অ’ পত্রিকার সম্পাদক দাঁড়িয়ে আছেন!

কী চাই, লেখা? তবে অ’ এর জন্যে যদি
আমি অরণ্য-ধারণা আজ লিখি
সবাই বলবে না-এ মিথ্যে? মিথ্যে বাঘ ও মিথ্যে হরিণ?

কবিশালার কাণ্ড দ্যাখো- ঘর থেকে যেই উঠোনে গেল
আর অমনি লিখে ফেলল:
অ’ বলতে অরণ্য আজ আ বলতে আগুন...

অভিক্ষেপণ

রাত্রি লিখে তার পাশে অন্ধকার
লিখতে হয়নি!
পাড়ারা ঘুমিয়ে যায়। যেভাবে
কবর খোঁড়ার আগে, অনিবার্য
        মৃত্যু লেখা হয়

এক সেই অতিমানবীর কথা
লিখতে পারিনি বলে
আফসোস করি, বড্ড ভুল হয়ে গেছে;
ফলে প্রায়ই মনে হয়, আড়ং-এ গিয়ে
            শাড়ি কিনে আনি।
সেই শাড়ি আমি তো পরব না, কেউ পরলে
খুলে ফেলব, আমি খুলে ফেলতে জানি

নাহ, সমুদ্রে বেড়াতে গিয়ে
        এইবারও একা ফিরে এসেছি

প্রসঙ্গক্রমে, প্রেম লিখে তার সঙ্গে
        আমাকে দেখে
কথা উঠছে, ‘এই কি কবি?’ শোন-
কবিতা লেখার আগে, কেউ হয়ত
        কবি হয়ে যায়, কেননা
কবর খোঁড়ার আগে, অবধারিত
        মৃত্যু লেখা হয়

জীবনানন্দের উদ্দেশ্যে

যে জীবন কোকিলের, কাকদের; আমাদের সঙ্গেও তার
                দেখা হয়ে গেল।
কার ডিম কার বাচ্চা, কী ভয়াতুর মিথ্যা মিথ্যা
মিথ্যে আদর ভালবাসায় কবিজন্ম হলো?

যে জীবন বানরের, মানুষের
        কবিদের সঙ্গেও তার
            ঠিকই দেখা হয়!
এই তথ্য তর্কযুক্ত, মানসিক, তাই
        কবিতা-টবিতা লেখা
এবং লিখতে লিকতে শাহবাগে যাওয়ার পথে
যে জীবন দোয়েলের ফড়িঙের
        শিশুদের সঙ্গেও তার
            দেখা হয়ে যাচ্ছে, জাদুঘরে
                মমিময়

আমার গার্লফ্রেন্ডকে

পাখিকে আর পাখিই বলা যাচ্ছে না, শাহবাগে
তাতে ধরা খেয়ে যাব, মন্ময় বন্দুক আজ বন্ধুদের হাতে।
আমি কিভাবে বলব: পাখি! আমাদের বর্ষাও একটা পাখি
                আমি বর্ষার মামা

ছিন্নপ্রধান ঘুমের মধ্যে আমি মাঝে মাঝে বিশ বছর হয়ে শুনি-
বুড়ো পাখিটা মরবার আগে, একে-ওকে-হঠাৎ আমাকে, বললেন:
‘অহেতু মুদ্রণচর্চার ফলে একদিন পাখিবিপর্যয় দেখা দিতে পারে, তাই
                উড়তে উড়তে সমুদ্রকে মনে রেখ’

আজ আরও স্পষ্ট হলো বলিরেখা। তো
পাখিচর্চার পিরিয়ড যাচ্ছে শুনে, শাহবাগে গিয়ে দেখি
বিদগ্ধ কার্তুজ এঁকে তাক করে আছে পাখিসমিতির চোখ!
ধরে ফেললেই খবর আছে, আমি পাখিদের ছেলে

যা বলছিরাম, বর্ষাও একটা পাখি। বর্ষা বলল, বড় হয়ে ওঠার আগেই
আমি আগেকার পাখিদের মতো মাছটাচ হয়ে যাব।

কিন্তু আমার মনে হচ্ছে, একদিন মাছকেও আর মাছ বলা যাবে না
তাতেও সে ধরা পড়ে যাবে, অসূয়া-বটিরা ঠিকই চিনে ফেলবে;
আমার কিছু কবিতাও শেষপর্যন্ত হানিমুনে গিয়ে রূপচাঁদা চিতল ইলিশ হয়ে যায়।

তাই আমাকে বলে যেতে হবে তোমাকে এবং তোমাকে এবং কাউকে
পার্বত্য-ভোরের রোদে আমি পাহাড় হয়ে যেতে যেতে
                একসময় মেঘের সঙ্গেও আড্ডা দেব,
                    ভোগ করব ভয়ানক জল
হঠাৎ বলব, ‘গার্লফ্রেন্ড, একটু করুণাই করো, শাহবাগে তো খুব
                হাহাকার হচ্ছে;
আফটার অল ওখানেও আমার পাখিজীবনের মাছজীবনের রক্ত পড়ে আছে’

Wednesday, September 16, 2009

সংশয়ানুরাগ

পুনশ্চ এ রাতে        বেঘোরে বেড়াতে
    এড়াতে চেয়েছি ভুল।
আমি ক্ষীয়প্রাণ        অপসৃয়মাণ
    মৃতের শিয়রে ফুল।
অথচ ধানের        পাড়াগাঁ-গানের
    মাঠের মহিমা দূরে
চাঁদে কিছু পোড়া        মহীনের ঘোড়া
    বা আসে বোরাক উড়ে!
কোথা থেকে আসে        কার্তিকের ঘাসে
    জানে কবি-জুনিপোকা
কথা-ম্রিয়মাণ        আমি ক্ষীণপ্রাণ
    অতি অতিতর বোকা।
বোকা কথা বলি        শমী-শাল্মলি
    ভালবাসা কিছু জানি
আলাপে-আলাপে        প্রতিভার পাপে
    আমি রাজা আমি রাণী?
গুপ্ত এ প্রেম        বিকশিত হেম
    একে রাখি কোন পাত্রে?
রাত ভোর হয়        গুরু মহাশয়
    বোভোয়ার বর সার্ত্রে।
এসব কিছু না        অতীত-অধুনা
    আগামী কালের ভোরে।
গহন মরম        ভিড় সমাগম
    আমার মধ্যে, ঘোরে!

সন্ধ্যা প্রসঙ্গে

আবার সন্ধ্যাকে নিয়ে হই চই পড়ে গেল!

যখন-তখন, এখন সন্ধ্যার গল্প উড়ছে, আর
            দিনের পাচিল ডিঙিয়ে
সন্ধ্যা আসছে, যেভাবে সন্ধ্যা আসে

সন্ধ্যা সেই অতিথিমাত্র, ক্ষণস্থায়ী
যে এসে নিজের মতোই চলে যেতে ভালবাসে

তবে কবিতা লিখতে গিয়ে
    কবে প্রথম শিখিয়েছিল
        বিশ্ব সন্ধ্যায়ণ?
তাছাড়া, সন্ধ্যাকে ছুঁয়ে প্রথম কেঁপেছি কখন?

হয়ত এসব বলা হবে না
    সভা, সেমিনার-ক্লাসে;
যদিও সন্ধ্যা... ক্ষণস্থায়ী... যদিও সন্ধ্যা আসে

যদিও
সন্ধ্যা আমার অনেক শব্দ
        পুড়িয়ে দিয়েছে
    পোড়া জোনাকির অঙ্গে-
    শুকনো পাতার সঙ্গে;
পোড়াশব্দই কুড়িয়ে ফিরেছি
        নিবিড় রাত্রিসংঘে।

তো, আবার সন্ধ্যাকে নিয়ে হইচই উড়ে গেল
    শোণ্ডিকালয়ের গন্ধ্যে;
গূঢ় সন্ধ্যাপুষ্প ফুটছে
        আমাকে দেখে
    বাঙলা কবিতা
            মাথা কুটছে
        হায় হায়...

একটু আগেই এসে চলে গেছে
        ধরতে পারিনি
সন্ধ্যা নাম্নী মৃত্যুচারিণী
সন্ধ্যা কেন যে আসে?

অতিথিনী সন্ধ্যা কখন, কবিকেই ভালবাসে?