Friday, September 18, 2009

কবিতা কুটিরশিল্প

টোকন ঠাকুর
প্রথম প্রকাশ
ফাল্গুন ১৪০৭, ফেব্রুয়ারি ২০০১
স্বত্ত: বর্ষা বিভাবরী
প্রচ্ছদ
ধ্রুব এষ
অক্ষরবিন্যাস
মিজানুর রহমান
প্রকাশক
শ্রাবণ প্রকাশনী
১৩২ আজিজ সুপার মার্কেট (২য় তলা), শাহবাগ, ঢাকা
ফোন: ০১৮২১৪৫৫৭
মূল্য: ৬০ (ষাট) টাকা


ISBN: 984-813-023-3

অংশীদারিত্বের কথা উঠলে

আমার কবিতা যারা পড়েন, পছন্দ করেন, তাদেরই।

এবং তাদেরও, যারা পছন্দ করেন কী না জানাতে
অসমর্থ বাক্য ছুঁড়ে দেন, রুগ্ন আস্ফালন করেন,
অধিকন্তু ব্যবচ্ছেদ-বিলাসী হয়ে বাতাস কাটতে বসেন।

সেইহেতু মহান মাৎসর্য্য, অম্লকাতর অক্ষমতা
এবং লঘিষ্ট ধারণাবিদ্ধ তাদের চিন্তাযাপন দেখে
আমি তাকেও উপাত্ত মনে করি। ঔচিত্য কবিতা লিখে ফেলি।

সঙ্গত কৃতজ্ঞ হই!
অন্তত আমার কবিতা তাদের পড়তে হয়।

এবছর বনভূমি আরেকটু উজাড় হল, বস্তিও।
ইহা দেখে, বই পড়ে, বুঝতে শিখি, মানুষ ও গাছ
তার স্থিতক্ষেত্রে ক্রমশ শিকড় গজিয়ে রেখে
        শীর্ষে উঠতে চায়!
ফলে তারা ভালবাসার সঙ্গে বেদনাও ভালবাসে!

অশ্রুরা লুকিয়ে থাকে উৎসবের পাশে

ছুরিকবিতা

ছুরি, তীরের তীক্ষ্ণতা নিয়ে ছুটে গিয়েছিলে! তাতেই
ভুলতে ভুলতে, ভুলে যাচ্ছিলাম-
    কত তীর লক্ষভ্রষ্ট হয়!

আধা-লিপ্ত আধা-নির্লিপ্তির গানে গানে বলি:
    লক্ষভ্রষ্ট তীর তুমি আর ফিরে আসবে না?

রক্তিম ফলকে দেখে যথারীতি ক্ষুধা পেয়েছিল।

ক্ষুধাই তো ছুরি সেই লালিত ডাইনি, প্রেম
তীরের তীক্ষ্ণতা নিয়ে ছুটে গেছে দিকে দিকে
            আর ফিরবে না?

জল-বালুচর

অনেক কবিতা ছাপা হ’ল।
অনেক দুঃখও পেয়ে গেলো ধ্রুপদী মর্যাদা।
অনেক খ্যাতিও শেষে উপচে উপচে
            ফেনা হয়ে গেল

একটি কবিতা থেকে আরেকটি কবিতায়
        যেতে গিয়ে
মধ্যপাতে ফাঁকা দিয়ে
ডুকে পড়ল মধুবন্তী, নারীবন্ধু, গুপ্ত-নানাচ্ছল
এখন যে কবিতা লিখছি, কবিতার নাম
            ‘জল’
-এটি বালুচরে ছাপা হবে! ফলে
রৌদ্রে বখাটে হলেও, জোছনাকালীন দাহশিল্প
            মনে করে
যদি মরুবিশেষজ্ঞরা জেনে ফ্যালে-
আমার খ্যাতির সঙ্গে বেঁচে থাকছে
        মাইল মাইল অখ্যাতি
        আর না-ছাপা হাসি, গূঢ় বিফলতা?

আশংকা

বাবুই যে বৈষ্ণব-ঘরানার পাখি, এই তত্ত্ব, পরমার্থ অভিজ্ঞান
            আমি যথেষ্ট বুঝেছি
চড়ুইয়ের মতিচাঞ্চল্য, দেহস্ত সংরাগ

ভাল লাগছে ভরপুর ভাবনা-সন্দেশ

আমার মনে হয়, বাবুইবৃত্তির সঙ্গে আজ
চড়ুইবৃত্তির একটা টক্কর লাগছে

এদিকে আমি কবি হয়ে উঠছি

মা

মা ঘুমিয়ে পড়েছেন!
আর, আমি তার শিয়রে দাঁড়িয়ে আছি
        মুঠোভর্তি কবিতা নিয়ে;
আলোর ছোবলে এসে, ভোরবেলা মুছে দেবে
রাত্রি থেকে বিচ্ছুরিত অনাথ কাহিনী।
নিরাকার ভস্ম হয়ে পুড়ে যাবে সকল কবিতা

কিন্তু এই রাত্রিবেলা, বোস্তামিকে মনে করে
            আমি যদি দাঁড়িয়ে থাকি,
এভাবে কি জানা হবে- পিপাসায় আমার মা
            কি চেয়েছেন?
আমি কেন কবিতাই মুঠো ভরে আনতে পেরেছি?

তবে একথা সত্যি, আমি হয়ত অভাবিত কাটিয়েছি দিন;
পিপাসায় পানি আর কবিতাকে সদর্থক ভেবে
দ্বিতীয় ভুলের দিকে কবিময় সফলতা কুড়োতে গিয়েছি।
এছাড়া স্বীকার করছি- প্রথম ভুলের জন্যে
ভূমিষ্টকে দায়ী করে আমার মামলাগুলো
        এখনও খারিজ হয়ে যায়নি!
ফলে, আমার যে-বোন পালিয়ে গেছে
        তার জন্যে আধোগুপ্ত কান্নাজাগা রাতে
দেখেছি, অনেক কবিতাই চোখ ফেটে বেরিয়ে আসতে চায়;
যদিও, কবিতাজন্মের প্রথম শর্ত ‘শব্দ’... সেই শব্দই এড়িয়ে
নিঃশব্দ আমার মা; আমি আর পিপাসাকে
            বুঝতে পারিনি বলে
বাৎসল্যের চোখ থেকে ঝরে পড়া কবিতাও পরতে পারিনি

মা এখন ঘুমোচ্ছেন।
আর, আমি তার শিয়রে দাঁড়িয়ে আছি
        মেঘলিপ্ত সম্ভাবনা নিয়ে:
রাতের যে-কোনও প্রান্তে, ঘুম ভাঙলে,
আমার বিনিদ্র হাতের মুঠো খুলে, তাকে এই
        জলমর্ম কিভাবে জানাব?
যদিও সংশয় থাকে, মেঘমর্মে কবিতা না-কবিতার
    প্রবণতা জল হয়ে থাকে?

উল্লেখ্য আমার পিতা সন্ধে থেকে ঘরেই ফেরেননি; তিনি
গার্হস্থ্য-বনের দিকে, হাঁটতে হাঁটতে হাত নেড়ে ডাকছেন-
        জোনাকি... ও জোনাকি, ফিরে আয়

সেই যে আগুন আমাকে শিখিয়ে গ্যাছে, ছোটরা পালিয়ে গেলে
                রোদের ছোবলে পুড়ে
সন্ধ্যার অদূরে একা পৃথিবীর জোনাকি হয়ে যায়!

তাই, অন্ধকারে অঙ্কুরিত উড্ডিন যন্ত্রণা
যা আমাকে ভালবেসে উপচে দেয় বাক্য উপহার

আজ মা’র শিয়রে দাঁড়িয়ে, এই যে দেখছি ঘুম, আবার দেখব আলোয়
ভোরবেলা নিরাকার ভস্ম হয়ে পুড়ে যাচ্ছে
        মুঠোভর্তি আমার কবিতা

বিরাট ঘটনা

তখন, হোটেলে বসে, দুপুরের ভাত খেতে গিয়ে
ভালবাসা টেবিলের নিচে চলে যায়

ভালবাসা ভর করে পায়ে পায়ে
        গেরিলা ধারায়

হয়ত জোড়াজোড়া জানে- আঙুলের কৈবল্যকুসুম ফুটিয়ে
ভালবাসা বাতাস সেলাই করে

তখন, দুপুর নিভিয়ে দিয়ে
        বাল্যসন্ধ্যা ঝরে

যদিদং হৃদয়ং মম তদুস্ত তব; যদিবা
ভালবাসা হোটেলের ভাত, টেবিলের তলে তলে তুরীয়ং
            চুরিরং পায়ের প্রতিভা

ভাবীর মন পুলিশ পুলিশ

নিতান্ত পেটের দায়ে, আমার ভাই
        দারোগা হয়েছে।
ঘরে ফ্রিজ, টেলিভিশন-ডিশ
ডিশ দেখে বোকা বোকা দেবরটিও আজ
            অ্যাপ্রেন্টিস

গৃহের ভেতরে থেকেও, ভাবীর মন
        সারাক্ষণ পুলিশ পুলিশ

প্রত্যেকের ব্যক্তিগত নদী

হাঁসগুলিকে সরাসরি হাঁস না-বলাই ভাল।
লিখিত ইঙ্গিত রেখে কবিতাও বলা যায়।
আরও বলা যায়- আমি ইঙ্গিতবাদী মানুষ,
চেষ্টা করছি ঘোড়াগুলোকেও বিশেষ কিছু ভাবার।

তাই, জলঢেউয়ের বেআবব্রু বুক খুব ধরেছি
মনে পড়ছে অনেক কথা সব না বলাই শ্রেয়
যতই আমার দেহ বলি, দেহ কি আর দেহই?

আবার, কবিতাগুলো কি যথার্থ কবিতাই?
তাহলে কেন দিঘি দেখলেই লাফিয়ে পড়তে যায়?
ক’হাত দূরেই মধ্যরাতের সমুদ্র গর্জায়
ক্রোধের  ফেনা তীরের বালি কী চায় সঠিক জানি?

ব্লাউজগুলিকে শুধুমাত্র ব্লাউজ বাদেও বলব:
সতর্কতার ফাঁকে হঠাৎ অসতর্কের আগুন!
কিন্তু সে ঠিক আগুনও নয়, বাঘের চোখে যাদু
মোহিনী সংকেত পেয়ে, তাকে মৃত্যুই বলি যদি-
ব্যথাকে বলব জল, সেই জলই প্রত্যের ব্যক্তিগত নদী

স্বপ্নমন্ত্রীর বিদেশ গমন

স্বপ্নমন্ত্রী বিদেশ যাবার আগে, পুরনো এয়ারপোর্টে দাঁড়িয়ে
যয যা বললেন, অবশ্য আমরা যারা কাগজের লোক-
যে-যার মতো টুকে নিয়েছি

এখন রিপোর্ট লিখব, রাতে পেস্টিং, কালকেই ছাপা; দৈনিক সম্ভাবনায়

মন্ত্রীর ফিরতে দেরি হবে। কেননা মাননীয় মন্ত্রী স্বপ্নবাবু খুব অসুস্থ
দেশে তো তেমন সুটিকিৎসার ব্যবস্থাও রাখেননি

তাই তিনি বিদেশ যাচ্ছেন; তবু পুরনো এয়ারপোর্ট দাঁড়িয়ে
মন্ত্রী আর কি কি বললেন, আমরা সঠিক বুঝতে পারিনি
    তো সেই ‘কি কি’গুলো অবশ্য ছাপাও হবে না,
                    না-হোক

Thursday, September 17, 2009

মুদ্রণ-ট্র্যাজেডি

হ্যাঁ হ্যাঁ, শুনতে পাচ্ছি বনমোরগের গলা
পায়ের নিচে প্রশ্ন করছে পাতার মহিমা!
অরণ্য মিত্র, কেমন চলছে গাঢ় শিল্পকলা?
খবর জানে সুশীল সমাজ, ঘরের বউঝি’রা?

মরাপাতারা লো, তুই কি জানিস ফারাওঁ-পিরামিড?
মমি দেখলেই জিগ্যাচ্ছি: মমি তুমি কার?
রাজাবদল প্রজাবদল হাওয়াবদলবিদ
ঋতুবদল বদলে দিচ্ছে ঋতুর ব্যবহার...

ছন্দবদল? এই পদ্যে? কোথায় বদলানো?
এই একটু শীতের আভা, নাড়ার আগুন-মাঠে
আর সবই স্মৃতিনির্ভর, কাব্যে পড়া, মানো?
তৈলচিত্রের ভূচিত্রটা  দেয়ালে ঝোলে ফ্যাটে

ওটাই কিন্তু ঋতুর মমি, শালিক গেলেন ক্ষেপে
পদ্যগ্রন্থে হেমন্তকে কারা দিচ্ছেন ছেপে?

বাণী তীরন্তনী

সিদ্ধান্ত, সাঁকোর ওপরে বসে থাকে

সিদ্ধান্ত নেবার পর
    সেই সাঁকো ভেঙে যায়

ঘামের ঘটনা

এলো উৎসবের দিন। গ্রন্থের বাইরে এসে
প্রত্যেকটি কবিতাই উৎসর্গ হতে চায়

কিন্তু আমি কিভাবে তা করি?
            কাকে?

সরাসরি চাইলেই পারো, প্রিয় প্রিয় প্রিয়
    পৌরুষের ঘাম, ঘামের ঘটনা
            কবিতাকে!

অ আ

অ’বর্ণের সঙ্গে সর্বশেষ সাক্ষাৎ হয়েছিল সভয়-অরণ্যে।
আর তখনই আমি বুঝতে পারি
অ-এর মধ্যে অজগর ছাড়াও
    বাঘ, বাঘের ভয়
        হরিণ, হরিণীর নাভি
            এমনকি বাওয়ালিরাও বসবাস করছে

আমি অরণ্য থেকে ফিরে, শহরে এসে দেখি
অ’ পত্রিকার সম্পাদক দাঁড়িয়ে আছেন!

কী চাই, লেখা? তবে অ’ এর জন্যে যদি
আমি অরণ্য-ধারণা আজ লিখি
সবাই বলবে না-এ মিথ্যে? মিথ্যে বাঘ ও মিথ্যে হরিণ?

কবিশালার কাণ্ড দ্যাখো- ঘর থেকে যেই উঠোনে গেল
আর অমনি লিখে ফেলল:
অ’ বলতে অরণ্য আজ আ বলতে আগুন...

অভিক্ষেপণ

রাত্রি লিখে তার পাশে অন্ধকার
লিখতে হয়নি!
পাড়ারা ঘুমিয়ে যায়। যেভাবে
কবর খোঁড়ার আগে, অনিবার্য
        মৃত্যু লেখা হয়

এক সেই অতিমানবীর কথা
লিখতে পারিনি বলে
আফসোস করি, বড্ড ভুল হয়ে গেছে;
ফলে প্রায়ই মনে হয়, আড়ং-এ গিয়ে
            শাড়ি কিনে আনি।
সেই শাড়ি আমি তো পরব না, কেউ পরলে
খুলে ফেলব, আমি খুলে ফেলতে জানি

নাহ, সমুদ্রে বেড়াতে গিয়ে
        এইবারও একা ফিরে এসেছি

প্রসঙ্গক্রমে, প্রেম লিখে তার সঙ্গে
        আমাকে দেখে
কথা উঠছে, ‘এই কি কবি?’ শোন-
কবিতা লেখার আগে, কেউ হয়ত
        কবি হয়ে যায়, কেননা
কবর খোঁড়ার আগে, অবধারিত
        মৃত্যু লেখা হয়

জীবনানন্দের উদ্দেশ্যে

যে জীবন কোকিলের, কাকদের; আমাদের সঙ্গেও তার
                দেখা হয়ে গেল।
কার ডিম কার বাচ্চা, কী ভয়াতুর মিথ্যা মিথ্যা
মিথ্যে আদর ভালবাসায় কবিজন্ম হলো?

যে জীবন বানরের, মানুষের
        কবিদের সঙ্গেও তার
            ঠিকই দেখা হয়!
এই তথ্য তর্কযুক্ত, মানসিক, তাই
        কবিতা-টবিতা লেখা
এবং লিখতে লিকতে শাহবাগে যাওয়ার পথে
যে জীবন দোয়েলের ফড়িঙের
        শিশুদের সঙ্গেও তার
            দেখা হয়ে যাচ্ছে, জাদুঘরে
                মমিময়

আমার গার্লফ্রেন্ডকে

পাখিকে আর পাখিই বলা যাচ্ছে না, শাহবাগে
তাতে ধরা খেয়ে যাব, মন্ময় বন্দুক আজ বন্ধুদের হাতে।
আমি কিভাবে বলব: পাখি! আমাদের বর্ষাও একটা পাখি
                আমি বর্ষার মামা

ছিন্নপ্রধান ঘুমের মধ্যে আমি মাঝে মাঝে বিশ বছর হয়ে শুনি-
বুড়ো পাখিটা মরবার আগে, একে-ওকে-হঠাৎ আমাকে, বললেন:
‘অহেতু মুদ্রণচর্চার ফলে একদিন পাখিবিপর্যয় দেখা দিতে পারে, তাই
                উড়তে উড়তে সমুদ্রকে মনে রেখ’

আজ আরও স্পষ্ট হলো বলিরেখা। তো
পাখিচর্চার পিরিয়ড যাচ্ছে শুনে, শাহবাগে গিয়ে দেখি
বিদগ্ধ কার্তুজ এঁকে তাক করে আছে পাখিসমিতির চোখ!
ধরে ফেললেই খবর আছে, আমি পাখিদের ছেলে

যা বলছিরাম, বর্ষাও একটা পাখি। বর্ষা বলল, বড় হয়ে ওঠার আগেই
আমি আগেকার পাখিদের মতো মাছটাচ হয়ে যাব।

কিন্তু আমার মনে হচ্ছে, একদিন মাছকেও আর মাছ বলা যাবে না
তাতেও সে ধরা পড়ে যাবে, অসূয়া-বটিরা ঠিকই চিনে ফেলবে;
আমার কিছু কবিতাও শেষপর্যন্ত হানিমুনে গিয়ে রূপচাঁদা চিতল ইলিশ হয়ে যায়।

তাই আমাকে বলে যেতে হবে তোমাকে এবং তোমাকে এবং কাউকে
পার্বত্য-ভোরের রোদে আমি পাহাড় হয়ে যেতে যেতে
                একসময় মেঘের সঙ্গেও আড্ডা দেব,
                    ভোগ করব ভয়ানক জল
হঠাৎ বলব, ‘গার্লফ্রেন্ড, একটু করুণাই করো, শাহবাগে তো খুব
                হাহাকার হচ্ছে;
আফটার অল ওখানেও আমার পাখিজীবনের মাছজীবনের রক্ত পড়ে আছে’

Wednesday, September 16, 2009

সংশয়ানুরাগ

পুনশ্চ এ রাতে        বেঘোরে বেড়াতে
    এড়াতে চেয়েছি ভুল।
আমি ক্ষীয়প্রাণ        অপসৃয়মাণ
    মৃতের শিয়রে ফুল।
অথচ ধানের        পাড়াগাঁ-গানের
    মাঠের মহিমা দূরে
চাঁদে কিছু পোড়া        মহীনের ঘোড়া
    বা আসে বোরাক উড়ে!
কোথা থেকে আসে        কার্তিকের ঘাসে
    জানে কবি-জুনিপোকা
কথা-ম্রিয়মাণ        আমি ক্ষীণপ্রাণ
    অতি অতিতর বোকা।
বোকা কথা বলি        শমী-শাল্মলি
    ভালবাসা কিছু জানি
আলাপে-আলাপে        প্রতিভার পাপে
    আমি রাজা আমি রাণী?
গুপ্ত এ প্রেম        বিকশিত হেম
    একে রাখি কোন পাত্রে?
রাত ভোর হয়        গুরু মহাশয়
    বোভোয়ার বর সার্ত্রে।
এসব কিছু না        অতীত-অধুনা
    আগামী কালের ভোরে।
গহন মরম        ভিড় সমাগম
    আমার মধ্যে, ঘোরে!

সন্ধ্যা প্রসঙ্গে

আবার সন্ধ্যাকে নিয়ে হই চই পড়ে গেল!

যখন-তখন, এখন সন্ধ্যার গল্প উড়ছে, আর
            দিনের পাচিল ডিঙিয়ে
সন্ধ্যা আসছে, যেভাবে সন্ধ্যা আসে

সন্ধ্যা সেই অতিথিমাত্র, ক্ষণস্থায়ী
যে এসে নিজের মতোই চলে যেতে ভালবাসে

তবে কবিতা লিখতে গিয়ে
    কবে প্রথম শিখিয়েছিল
        বিশ্ব সন্ধ্যায়ণ?
তাছাড়া, সন্ধ্যাকে ছুঁয়ে প্রথম কেঁপেছি কখন?

হয়ত এসব বলা হবে না
    সভা, সেমিনার-ক্লাসে;
যদিও সন্ধ্যা... ক্ষণস্থায়ী... যদিও সন্ধ্যা আসে

যদিও
সন্ধ্যা আমার অনেক শব্দ
        পুড়িয়ে দিয়েছে
    পোড়া জোনাকির অঙ্গে-
    শুকনো পাতার সঙ্গে;
পোড়াশব্দই কুড়িয়ে ফিরেছি
        নিবিড় রাত্রিসংঘে।

তো, আবার সন্ধ্যাকে নিয়ে হইচই উড়ে গেল
    শোণ্ডিকালয়ের গন্ধ্যে;
গূঢ় সন্ধ্যাপুষ্প ফুটছে
        আমাকে দেখে
    বাঙলা কবিতা
            মাথা কুটছে
        হায় হায়...

একটু আগেই এসে চলে গেছে
        ধরতে পারিনি
সন্ধ্যা নাম্নী মৃত্যুচারিণী
সন্ধ্যা কেন যে আসে?

অতিথিনী সন্ধ্যা কখন, কবিকেই ভালবাসে?

সব নাম ছদ্ম নাম

সব নাম ছদ্ম নাম। ছদ্মনামে থাকি।
এমনকি তোমাকেও ছদ্মনামে ডাকি।
শুধুমাত্র জল, তাকে নদী বলে জেনে
যারা নীল, তাদেরও তো লাল রঙে চেনে
আমাদের কালো কালো ভায়োলেট চোখ।
এরই ফলে ছদ্মময় ছড়ালো কুহক?

যেমন আমি একা তবু বহুবিদগামী
কখনও প্রকাশ করি অবিকল আমি?
এমনকি গতকাল যাকে তুমি ভেবে
কথা বলে গেছি যত বাতাসী হিসাবে
তাতে কেউ ‘তুমি’ ছিল? আজ মরি শোকে
ছদ্মভাব লিখে রাখি সমাধি ফলকে।

কিন্তু একে সমাধি তো কেউ-ই বলে না,
বলে গ্রন্থ, আমি জানি গ্রন্থও চলে না।
ছদ্মবেশে কত গান, বাতাসে হারায়

আর আকাশ? আকাশও তো মহাছদ্মবাজ!
গতকাল কৌশলে এসে গেল আজ

তবে এই আজটাও ভাল ছদ্ম জানে
আমাকে লিখিয়ে নেয় আগামীর মানে
মানেময় বহু বাক্য বর্ণে ঝিকিমিকি
প্রতিদিনই প্রিয় সব ছদ্মনামে লিখি;
লিখি আর বনসাই ছোট্টগৃহকোণে
আমি কি হারিয়ে যাব বট-ছদ্মবনে?

সব নামই ছদ্মনাম, প্রতি জনে জনে

Monday, September 14, 2009

মেঘবৃষ্টিবর্ষা প্রাইভেট লিমিটেড

কতদিন হল বৃষ্টির বয়স? কতদিন হল বর্ষার?
কতদিন আমরা দেখছি এসব? কতদিন আর
দেখেশুনেশিখে লিখে লিখে যাব? বলব: ‘কদম!’
বর্ষাবৃষ্টির জলের ভাষা, কী সমাগম...

সমাগম খুব ভাল? সমাবেশ ভাল নয়?
পৃষ্ঠা পৃষ্ঠা মিথ্যে আকাশ, মেঘাচ্ছন্ন, বৃষ্টি নামবে?
                নামল বিস্ময়!
বিস্ময়ের বান্ধবীই কিন্তু বর্ষা, প্রমাণ আছে
        প্রমাণ দিলে কি হয়?

সত্যমিথ্যার জলাঞ্জলি বরং একটা গল্প বলি, শোন-
বৃষ্টির-না কাল বিয়ে হয়ে গেল! বৃষ্টি চলে গেলে
            দেখাদেখি বর্ষাও যাবে
ততদিনে কত চোখ মতা হারাবে!

সে-সময় বৃষ্টির, সে-সময় বর্ষার
        লাবণ্য দেখবে কে? এই ‘কে কে'দের সংখ্যাই বা তখন কত?
অন্ধচোখের অশ্রু বলছে- মেঘ থেকে যা সজল... ঝরে
            তা মেঘেরই ক্ষত

ক্ষত বলতে বৃষ্টিবর্ষা, উতলাপ্রধান চিত্তচর্চা
        তব বঙ্গের দায়
যত ভাব সব প্রাইভেট আর উবুউবু-মন তাও লিমিটেড
                ঘনঘোর কবিতায়

বালুর ওপরে রৌদ্র, বেলেহাঁস, কবিতা ইত্যাদি


একবার পদ্যের পানে চেয়ে, একবার গদ্যের পানে চেয়ে, এ জীবন ধাঁধিয়ে দেব- ধর্মেও ভাবিনি। তাই বেলেহাঁস কখনোই উড্ডয় শোবে না জেনেও, আমি তাকে মুখস্ত করেছি। নদী থেকে জল, মাছ, এমনকি নৌকোও নয়, আমি মুগ্ধ বাঁকতন্ত্র তুলে এনে কবিতায় প্রতিষ্ঠা করেছি।

এতে করে, একদিন দেখি, দৃশ্যান্তরের ভিতর দিয়ে বদলে যাচ্ছে আমার ধারণা। কবিতারা উড়ে যাচ্ছে কুসুমের আকাশের দিকে, মতান্তরে বাঙলা কবিতা উড়তে উড়তে বেলেহাঁস হতে শিখছে

যদিও কিছুকাল পদ্যে, পদ্যের স্বভাব লেগে আছে আমার আঙুলে। ফলে, মাধুরী কিছুতেই মনীষা হয় না... যেমন গদ্য, কেটেকুটে যাচ্ছে কিন্তু রক্ত বেরোচ্ছে না! তাহলে কি রক্তশূন্যতার এই ফ্যাকাশেবেলায় অঝোর-কবিতা সম্ভব? বড় জোড় আমরা একটা বেলেহাঁস ধরে তাকে জবাই করতে পারি, আমরা দেখতে পারি উড্ডয়নপ্রিয় এই পাখি শেষপর্যন্ত কবিতা কী না!

গদ্যের গারল্য নিয়ে, এরপর ‘বালুর ওপরে রৌদ্র’ শীর্ষক প্রবন্ধ লিখতে পারি! নদীর মধ্যে ভ্যান চলে যাচ্ছে দেখে আমরা ফারাক্কা-জলের প্রবাহ বুঝতে পারি। যদি, বিক্রি হয়ে যাওয়া ব্রা’র নিয়তির কথা ভেবে দোকানির মতো অতিবণিকের বাচ্চা না-হয়ে পড়ি, তো মনে হয় পানে চাওয়া ধাঁধাবরী বাক্যরাগ, বাঁকতন্ত্র বিফলে যায়নি

সান্ধ্যভাষা, পদ্যের ব্লেডগুলি গদ্যে তরবারি, এর মধ্যেই আমি কবিতা লিখতে পারি

ফড়িঙজন্মফল

ফড়িঙ ধরতে গিয়ে, কী কারণে আমি ভাই
ফড়িঙ হয়ে যাই? কী কারণে ঘাসে ঘাসে
            নিজেকে জড়াই?

একদিন, বেলা কিছু পড়ে এলে, সনির্বন্ধ একা শীর্ষ
        অতলান্তে উপবিষ্ট কবিও জানে না-
কী কারণে কবিতায় ফড়িঙ এসেছিল? আর
কী কারণে হাওয়ারাও ভালবাসে ফড়িঙের ডানা?

যতদূর জানা যায়, ফড়িঙ এখনও কোনও
        পাখি স্বীকৃতি পায়নি
মহাউড্ডীন মায়াবী লোকে

তাই বলে, ঘাসবনে উড়তে উড়তে
যদি কোনও ফড়িঙিদের সঙ্গে
        দেখাই না হলো:
তবে সেই মানুষ থাকাটা মন্দ ছিল না

Monday, September 7, 2009

অপেক্ষা, সাম্প্রতিকী, আকাঙ্ক্ষা

এখনও অপেক্ষা থেকে খুব বেশি দূরে সরে যাইনি
আজকেও ফুটেছে কলি
        দূরের মল্লিকাবনে

একবার মল্লিকারা বদলি হয়ে দূরে চলে গেল,
মনে পড়ছে না, যে
কতজন মল্লিকা ফুটে ফের ঝরেমরে গেল?

অজস্র প্রশ্নের দিন, কিন্তু কেন? জানি না।
আমার না-জানা তো তোমাদের জানার সমান!
কেননা অপেক্ষা করি, অপোর চোট মেয়ে ‘না-জানা’
সে আমার বাল্যবধূ! কিন্তু তাকে তালাক দেব
        সে কথা ভাবতেই, মনে হয়
আমার শৈশব নিয়ে রাত্রিসংঘে জুয়াখেলা
            আমাকে মানায় না

তো, শিশুমন পাহাড়ের কোলে
ঢাকা ছেড়ে প্রায়ই যাচ্ছি
ঘুরছি, খেলছি সময়মতো
        ঢাকাতে ফিরছি!
কেউ কি জানছে? জানছে না
কেউ কি মানছে? মানছে না!

কিভাবে জানবে আমি কতদূর হাঁটতে হাঁটতে
‘ছাত্রবন্ধু’ ‘ছাত্রসখা’
        হারিয়ে ফেলে
            অপেক্ষা শিখছি, একা!
কিভাবে মানবে আমি প্রতিদিন
অপো লিখছি? আমার কপালে অপেক্ষাভাঁজ লেখা?

এখন যদি বলো, চলো-না হলুদ সর্ষেক্ষেতে
জড়াজড়ি করে ফুল হয়ে যাই-
        হলুদ সর্ষে ফুল!
আবার বলবে, যা এত অপেক্ষা
    এক ধরনের ভুল

আমি ভাবছি, মল্লিকারা একদিন ফিরে আসবে
এসে, তখন-না খুব হাসতে হাসতে বলে ফেলবে
        ‘হয়তো আমরাও ঠিক করিনি!
তা-বলে তুমি এই অপেক্ষমাণ?
        এটাই বা খুব ঠিক?

বলো আমার জবাব কোথায়? না-জানাটা
        শিখেছি বলেই
            উপায়বিহীন
                থেকে যাচ্ছি
                    অপেক্ষার ঘরে

তোমার সঙ্গে সর্ষেফুলের মাঠে গিয়ে
                গায়ে হলুদ মাখতে চেয়ে
                  রেখে যাচ্ছি আমার চিঠি!
               চিঠি তো নয়
                চিরকালীন পাতার বনে
           হলুদ পাতা ঝরে! চলো
          পাতায় বাঁধি ঘর

পাতা হলে পাতাই সই, যদি
    তুমি পাতাটি স্ত্রী-পাতা
        আমি পাতাটি বর...

হঠাৎ দেখা, বিবাহ-উত্তর দু’বান্ধবী

: তোর সুখে যায়, তাই না? তোর এমনি দিনে বেশি না-রাতে?
রাত মানে কি মধ্যরাত? বাকি রাতটা নিবিড় নাকি
            একস্ট্রেঞ্জা ফাঁকা?
ওর সঙ্গে মিষ্টি করে রাগ হয় না তোর?
এই শোন- ও ডাকাত, না চোর?

-আমার সুখ? হ্যাঁ সুখ আসে! কিন্তু খুব বেশিক্ষণ
থাকতে চায় না। তবে শুধু রাত্রিবেলা আসে
এসে, সামান্য থেকেই, যখন সে চলে যায়, আবার না-আসা পর্যন্ত
আমি যা যা ভাবতে থাকি, সেটা কিন্তু অসুখ
        কিন্তু আমার অসুখও ভালো লাগে

: অসুখকালীন, তোর কি তখন ইচ্ছেটিচ্ছে জাগে?

নেহায়েত পদ্য

বহুকথা বাতাসে হারিয়ে গেছে
বহুরোদ ঘরেও ফেরে না, আর
বহুমেঘ না-ঝরে পালিয়ে গেলে
তাদের করেছি কবিতায় ব্যবহার

বহুনীল আকাশে প্রাচীন ছাদ
বহুনাম লেখাই হলো না, ভেবে
বহুরাত বলেছে আকাশ থেকে
একটিদুটি কবিতা আমাকে দেবে

বহুসাপ কামড়ে দিয়েছে ঠোঁটে
বহুশীত কুড়িয়ে রেখেছি, ফলে
বহুদিন নিভতে নিভতে কালো-
একটিদুটি জোনাকি তখন জ্বলে

বহুশিস্ বাতাসে হারিয়ে গেছে
বহুবাঁক, কেন যে গিয়েছে বেঁকে?
বহুডাক পাঠিয়ে দেখেছি, তারা
সেই যে উধাও... আমাকে বসিয়ে রেখে

স্তন থেকে শুরু করে একটি মায়াবী ব্যর্থতা


এত এত প্রেম বলি, ইনিয়ে বিনিয়ে
অবিমৃশ্য স্তন, তুম যুগ যুগ জীয়ে

স্তন বিষয়ে আমার একটি কবিতা একদিন ছিল, এখন নেই!
এখন আমার একটি অধঃস্তন কবিতা হয়েছে,
যে কীনা আমার বিপক্ষে যায়...

আমার বিপক্ষে তো শাত্ররাও গিয়েছিলো,
কিন্তু আমি বেঁচে উঠি
                  এই হলো প্রবণতা;
এই হলো স্তন বিষয়ে একটি প্রাচীন সংকেত, ছেলেমেয়েদের

লোলিত মেঘের স্মৃতিখণ্ড অথবা একটি প্রিয় পর্যটন কেন্দ্রের
সম্ভাবনা নিয়ে স্তন চিরকালই শীর্ষে থেকেছে, এখনও থাকতে চায়!
                       এটা তার প্রবণতা;
সঙ্গে এও বুঝতে হবে, স্তনে বিশেষ কোনও প্রেম থাকে না
                       প্রেমের প্রবণতা থাকে;
এই হলো প্রেম বিষয়ে একটি সতর্কীকরণ, ছেলে-ছেলেদের...

এইসব চরচা খরচা করে
এখন, আমার একটি প্রেমন্থন কবিতা হয়েছে-
যে কীনা আমার বিরুদ্ধে যাবে
আমার বিরুদ্ধে তো রাত্রিরাও চলে গিয়েছিল
কিন্তু আমি বেঁচে যাই
                   চন্দ্রসাপেক্ষে, সপ্তক প্রজ্ঞায়
এও কিন্তু প্রবণতা, এ প্রবণতা কাদের?

পূর্বাপর কবি, মায়ামন্ত্র বাগেশ্বরী, ব্যর্থদের...

হাড়গুলো কথাগুলো

হাড়গুলো বেরিয়ে আসছে, হা হা করছে
            হাড়ের লাভা

সেই কবরটিকে দেখলাম!
    হাড়-বেরোনো কবর!!

বুড়ি-মা, তোমার বিউটি-বন-কে আমি
        হাড় বলতে পারি?

আজ, আজই মনে হলো-
    কথাগুলো বেরিয়ে আসছে,
        কথাদেরও বয়স হচ্ছে!

এককালের শিরায় শিরায় ছুটে বেড়ানো
        ছলকে পড়ার কথা
এতদিন বাদে হাড় হয়ে যায়নি তো?

ভিখিরি-বৃদ্ধা

কবিতার কথা উঠে
সময় সময়, ঠিক এও মনে হয়:
আমরা কি সেই ভিখিরি-বৃদ্ধার সঙ্গেই কথা বলছি?

আমাদের কথাগুলো ডোর-টু-ডোর ঘুরছে
ভিক্ষা দাও বা না-দাও, দরজা খুলে দ্যাখো:
    বৃদ্ধাদের চোখ থেকে ঝরে পড়ছে ফুল;

সে ফুল হয়ত শুকিয়ে গেছে, পানি পায়নি
            বর্ষা রাতেও?
মানি,
ভাত ফোটেনি রাত ফোটেনি বছর বছর অশ্রুপাতেও

কিন্তু কবিতা ফুটে ওঠে! তাই
কবিতার কথা বলি তো সেই
        ভিখিরি-বৃদ্ধার কথাই বলি

কবে থেকে সে ভিক্ষে করছে? মনে পড়ে না

গরিব মানুষ, হাতের লেখা খারাপ

একটি, পুরনো কুটির ঘাঁটতে গিয়ে, চোখভর্তি জল এসে গেল।

সন্ধ্যাগঞ্জে, এই ইচ্ছামতি হাওয়ায়
    না-জানিয়ে উড়ে গেল
        গত শতকের গান;
আমি গানের প্রসঙ্গ ভুলে, নিদ্রাভঙ্গ নদীতীরে
দেখতে পাই পরমার্থ... প্রায়-স্মৃতি
        গরিব কবিতাগুলো
    আলগোছে শুয়ে আছে কুটিরবেলায়

গরিব কবিতা, তুমি আজ স্মরণ কর সেই
        নিঃসঙ্গতার নবীন দশক
মৃত্যুময় জোছনার মধ্যে ‘আগুন’ ‘আগুন’ বলে
    আমৃত্যু চিৎকারে পোড়াপাখিটাই কীনা
        রূপান্তরের কবি! কবিকে দেখেই
শস্যময়ী মাঠ তাকে মূর্খ মূর্খ বলে এড়িয়ে গেল, আর
প্রত্যাখ্যান এসে এমন করল যে, বেলজিয়ামের আয়না ভেবে
অত্যন্ত আগুনের দিকেই কবিকে
        তাকিয়ে থাকতে হলো

০২.

কুটিরের কবিতায় লেখা আছে আশ্চর্য কুহক
        কবিতা কুটিরশিল্প
কবিতাকে কুটিরেই বেঁচে থাকতে হয়!

পরস্পর আবারও কবি আবারও নবীন এসে
        হামাগুড়ি দেয়
তাদের আঙুল থেকে নখের মতোন বেড়ে যায়
            এককালীন বিস্তীর্ণ অভিমান-
কিন্তু তারা কবি বলে নখও কাটে না, অভিমানও ভাঙে না

০৩.
সন্ধ্যা থেকে রাত্রের পথেই, আবার মনে পড়লো
যে-কবিতা এত গরিব, তা দেখেই কি
    প্রেম জন্ম নিলো?
পুঞ্জপুঞ্জ আকাশ থেকে কয়েকলাইন ছেঁড়াবাক্য
আজকে আবার জোছনা লিখে ‘আগুন’ ‘আগুন’
            বলে ফেললাম আমিই?

ফলে, আমার এই কবিতাও একদিন পুরনো হয়ে যাবে
অবশ্যই গরিব বলে... আর আমি পথেই ঘুমিয়ে যাবো!

০৪.
এই ফাটাফাটি প্রজ্ঞায়, কালের লিপজেল সন্ধ্যায়
এখনও রহস্যপীড়িত আর
        প্রতারণাপূর্ণ তোমার কুটির-

আমি, চোখভর্তি জল নিয়ে, নতুন এই কবিতাটি
            রেখে যাচ্ছি তোমার কুটিরে

মেঘশেডিং

দৈনিকে প্রকাশ, আজ মেঘশেডিং
আজ হয়ত বজ্রপাতও হবে!
না চাইলেও দেখতে পাবো
        ভিজতে ভিজতে
ভিজে যাচ্ছে সমস্ত শহর

কিন্তু ঠিক, আমি ভিজব না যদিও
    গৃহের ভিতরে এসে
        বর্ষা ভিজে যাবে?

বর্ষা তার তাঁতবস্ত্রে
বৃষ্টি কুড়োবে-
না চাইলেও শুনতে পাবো
        ভাঙতে ভাঙতে
ভেঙে যাচ্ছে সমস্ত গোপন
তবু আমি, আমি ভাঙব না? যদিও
দ্বন্দের ভিতরে শুয়ে
        ছন্দ ভেঙে যাবে
ছন্দ তার সঙ্গীতজ্ঞ
        জীবন জুড়োবে।

দৈনিকে প্রকাশহেতু, আজ মেঘশেডিং!
আজ হয়ত মধ্যাহ্ণেই মধ্যরাত হবে! আর
    না হলে তো বৃথা
এই হাইড্রো-কাহিনী, অলিখিত স্মৃতি-
        পদ্য, জলের কবিতা;

পাঠক, আমি আর লিখব না মেঘ-সংহিতা?

Monday, August 31, 2009

ঘুনাক্ষরের কবিতা

মিলিয়ে দাও মাঠ মিলিয়ে দাও
আমি খেলবো, খেলার নামটি ঘোর!
জনাব বাতাস- কী আজ বলো চাও?
ঘোরের মধ্যে চলছে ম্যাটাডোর

এ-ঘোর কালে মিলিয়ে দাও পদ
উষ্ণপ্রধান বাক্য, বাহাদুরি
মিলিয়ে দাও নদীর মধ্যে মদ
স্তনে চোখ ফুঁকছে লুকোচুরি

আর মুদ্রা লিখতে পারি বলো?
মধ্যদিনের অমলধবল শিস্
ভেসে আসছে হালকা চপ্পলও
মিলিয়ে দাও বিশাল উনিশ-বিশ...

বিশালাক্ষীর ছুরিতে মিলাও পাঠ
ফিরিয়ে দিচ্ছি ছুটির নিমন্ত্রণ-
কয়লাফয়লা মিলিয়ে দিচ্ছে কাঠ
কাঠ মিলিয়ে দিচ্ছে সাধু, বন

ভ্রম আমার পাঠ মিলিয়ে দাও
সূর্যাস্তের রচনা লেখা দিনে
প্রশ্ন উঠছে বাঙলা কবিতাও
পাহারা দেয় রাত্রিকালীন ঋণে-

পাহারা করে প্রহরান্তের ছবি?
অবাক করা আলুকভুলুক চোখ;
ভাবালুতার তীর্থে বসে কবি
কমলা খায়? না খোসার কুহক?

তাতে বেরিয়ে পড়ে সত্য, যা দেহ
সত্য দেখেই উদ্ধত হয় খুনি!
যা মিলেছে, ঝিলে, বকের স্নেহ
হঠাৎ শহর শিখব না এক্ষুণি

গ্যাস-বিদ্যুৎ রঙিন জটিলতা
ওয়াসা-ডেসার জলবাহানাও মেনে
নদীশিল্পের সম্ভাবনার কথা
ভেসে যাচ্ছে সেনসেশনের ড্রেনে

তার মধ্যেও যত মৃত্যু, ধ্বনি
কাব্যভাষায় তুলে আনতে গিয়ে
পাড়ায় পাড়ায় শিশ্ন এবং যোনি
বিয়ে করছে টোপর মাথায় দিয়ে

মিলিয়ে দাও মনস্কাম, ও সাঁই
আখড়াপ্রধান বাক্যে মিলাও ঘোর
বাতাস যদি বসন্তে গান গায়
সঙ্গত তাই সাধুর শিষ্য চোর...

নিদ্রা বিভঙ্গের মুদ্রা

সে অনেকদিন; একাধিক রাত্রি নিয়ে ফেরিঅলা
পবনে রাখিয়া গেছে অভিসন্ধি, পরাক্সমুখ গলা।
নহ নহ নভোস্বপ্ন, লোকিক জানালা-দরোজায়
তখন চোত্তির মাস, অলৌকিক মেঘবরষায়
এত বেশি নিদ্রা এসেছিল, এত বেশি অ্যালিগড়ি?
শহরে রথের মেলা: ফেরিঅলা মুদ্রা চায়, পরী

ফলে, ঘর থেকে বেরুলেই বিভ্রমের সা-রে-গা-মা...
ঘরের বাইরে বরঙ গেয়েছি গৃহরাত্রিনামা!
তাতেই বাগর্থ মিলিয়ে গেছে বাষ্পচক্রে, বাগান্তরে
ফেরিঅলা মুদ্রা-মায়া খুঁজে মরে ফুসকা-শহরে

তো অনেকদিন, একাধিক মুদ্রা নিয়ে ঘুরে ঘুরে
যখন দেখেছি নিদ্রা, সে বিড়াল, পরীর আদুরে-
বিভঙ্গ মুরারী, তখন চোত্তির মাস, অলৌকিকে
একমাত্র ফেরিঅলা সব রাত্রি নিয়েছিলে ঠিকে?

জোছনাকালীন মরুশিল্প

মহীনের ঘোড়াগুলি মারা গেছে বহুদিন পরে
গহীনের পাড়াগুলি ভেঙে গেছে অরে অরে
কিন্তু তার গুপ্তকথা ঘোরে-ফেরে শাদা পোশাকের
দৃশ্যের ফাঁকে অবলা জোছনায়, কোমল প্রান্তরে

আমাদের অশ্রুগুলি উড়ে গেছে বঁধূবালুচরে
ত্রেগুলি পুড়ে গেছে ব্যক্তিগত-রতি-বৈশ্বানরে!
আমরা নিভেছি বলে কেরোসিন লণ্ঠনের আলোয়
বিশ্বায়নের অমলধবল ইউরো মুদ্রা ঝরে

গার্হস্থ্যের পূণ্যগুলি পলাতক, ফেরেনি তো ঘরে
শূন্যগুলি আমাদের আরিক প্রভাবিত করে।
আমরা শুনেছি আজও মহীনের মৃত্যু নাই
গহীনের তগুলি ঝরে পড়ে গানের মর্মরে-

সেই গানগুলি আর শোনাতেও চাই বলে লিখি
জোছনা লিখেছিমাত্র- বুকভরা মাঠ, ঝিকিমিকি

Sunday, August 30, 2009

সংকীর্তন

সহজ কবিতাশিক্ষা হাতে করে দাঁড়িয়েছি কঠিন সভায়

এক-অঞ্জলি নদীজল তুলে তাকে নদীই বলেছি
বলেছি সহজশর্তে চাই ঋণ:
        এই মাঠ, বনান্ত আকাশ... মৌলিক বিস্তৃতি!
কোথাও বেড়াতে গেলেই, বন্ধুদের মধ্যে আমি বলেছি-
এসব আমার আগেই দেখা, আমার শিরায়
                কয়েকজনের স্মৃতি

স্মৃতিগ্রাহী গানগুলো, আজ আবার জেগে উঠছে, উঠুক।
আজ আবার ইচ্ছে করছে- বাঁশবাগানের পাশেই পুঁতে আমি
        এই কাব্যভাষা; একে কঙ্কালের অভিব্যক্তি বলে
খুব সহজেই মেনে নেবে দরিদ্র কাশবন!
শুনতে পাচ্ছি, মা বলেন-
    ‘জটিল জন্মের পাশে তুই কিন্তু সহজ থাকিস
সহজে ভিক্ষে মিলবে, ভিক্ষে করে তুই হবি ভিক্ষেশ্বর...’

ওরে আউলা-ঝাউলা দিন, ভাবছি বাতাসের সঙ্গেও কথা বলে জানব
কত কি ফুলের তথ্য, মধুবন্তী রোদ আর মোহন সাধুর হাসি
                কী অর্থ করে?
সভাতল কাঁপিতেছে কঠিনের জ্বরে!

যদি, ভিক্ষুর সারল্যে আঁকা এই পদ,
একে সহজেই জড়িয়ে নেবে ধ্যানস্থ পাহাড়
            শিখরে শিখরে

আপনি বলতে পারেন

আমাদের কোনও কথাই হয়নি কিন্তু পাড় ভেঙে যাচ্ছে। আমরা ভাঙনশিল্পের নামে বারবার ঘরবাড়ি ভেঙে, নদী থেকে আর একটু দূরে গিয়ে সংসার সাজাচ্ছি। এই হচ্ছে গমনশীলতা। সম্ভবত আমরা কোথাও যাচ্ছি

যাচ্ছি কিন্তু যাচ্ছি নে, এমন সন্দেহ আছে আজও কয়েকজনের। তাদেরই একজন মাঝে মাঝে বলে: ‘ওহ গড, আমাকে পাথর থেকে মানুষ করে দাও...’ সে নাকি পাথর কেননা সে কাঁদতে পারে না। কেন পারে না, কেন সে পাথর- সে অনেক লম্বা কথা...। কিন্তু তারমধ্যে আমি ফেটে পড়বার প্রকল্প দেখেছি

আমাদের সঙ্গে কোনও আলাপই হয় না অথচ অনেক তরমুজ ফেটে যায়। ফেটে যায় স্থাপত্যিক মর্ম। আমরা, ফেটে যাওয়া দাগ থেকে একচিলতে শব্দ, টুকরো-ইট কুড়িয়ে নিয়ে, কবিতা সাজাই। এই হচ্ছে ভ্রমণশীলতা। এতে স্পষ্ট হয়, আমরা কোথাও থেকে আসছি

‘আসছি কিন্তু আসছি নে’ এমন ধারণামাত্রই আপনি বলতে পারেন, ঘূর্ণনশীলতাই প্রতিষ্ঠা পাচ্ছে। হয়তো তাই।

‘এই যে আজ আপনার সঙ্গে দেখা হয়ে গেলো’

কবুতর: লজ্জা: বিস্ময়

সেই কবুতর হারানো গল্পটা আমি আজও বলিনি।

হ্যাঁ, কয়েকটি কবুতর ঠিকই পাওয়া যাচ্ছিল না
আর আমার মনখারাপ লাগছিল।
আর আমি কবুতরের সন্ধানে গিয়ে
পাশের বাড়িতে খুঁজে-না-পেয়ে, পাশের বাড়িরও পাশের বাড়ি
                    চলে যাচ্ছিলাম
আর মনে মনে ভাবছিলাম:
        আমার কবুতর কেন হারিয়ে গেল?

তখন দুপুর, সে-দুপুর সম্ভাবনাময়, জলজ্যান্ত
গ্রীষ্মের শাসন মেনে, গৃহসম্ভব প্রতিবাদে
জেসমিন শুয়ে ছিল জেসমিনদের ঘরে; অভ্যন্তরে
ক্লাস সেভেনের অধিকারে আমি হারানো কবুতর খুঁজতে গিয়ে
                    দেখতে পাই:
পৃথিবীতে কবুতরই শেষকথা নয়!
কবুতর হারালে লজ্জা পাওয়া যায়, বিস্ময় পাওয়া যায়

পথের কবুতরবিক্রেতা, এই খাঁচাভর্তি কবুতর আমাকে দাও।
শহরে ওদের হারিয়ে ফেলে
দেখতে পাই, এখন আমি কোন ক্লাসে পড়ি?
জানতে চাই, আমার ভেতরে আর কতটুকু লজ্জা ও বিস্ময়
                    অবশিষ্ট আছে?

এই হচ্ছে কবুতর হারানো গল্প!
    এই পর্যন্ত লিখে
        কবির ভাষায় বলি:
হরিণীর নাভি থেকে শীতকাল উড়ে যায় গ্রীষ্মের দিকে

Saturday, August 29, 2009

বনপলাশের পদাবলি

শীত ছিল তো গত বছর- শীতের কথা বলি
হাতের মুঠোয় কুড়িয়েছিলাম ছোট্ট শহরতলি

শহরতলির স্মৃতি মানেই বাঁধিয়ে রাখা ছবি
এক বছরেই বুড়ো হলাম- আজ শহরের কবি

কবির কথা? কথা তো নয়, মৌনব্রত বাড়ি
জায়নামাজে চেয়েছিলাম একটি নিভাঁজ শাড়ি

শাড়ি মানেই স্বপ্ন এবং অসম্ভবের দাবি
কে বলল যে অশ্রুপাতে সমুদ্দুরও পাবি?

যা পেয়েছি শহরতলির লুব্ধ অভিসারে
নিইনি কিছুই তবু ঋণের স্নিগ্ধ বোঝা বাড়ে

শীত ছিল তো গত বছর- শীতের কথা ভুলে
এবার শহর জড়িয়ে নেব যথার্থ আঙুলে

বনস্পতি, বদলে যাব, মন্দ বলুক লোকে
বনপলাশের পদাবলি আয় শেখাব তোকে

দর্জি ও পোশাকের গল্প

আজ যে পোশাকে আপনি নিউমার্কেট এসছেন
        তার দর্জি কে? তাকে মনে পড়ে?

অবশ্য আজ এত গরম যে আপনার সঙ্গে আপনার
পোশাকও ভিজে যাচ্ছে আর আমাদের চোখে পড়ে যাচ্ছে-
            অভেজা জীবনে ভেজা কাপড়ের চরিত্র।

কিন্তু, একথা তো ঠিক, ওই দর্জিকে আপনার জানা হলো না।
যদিওবা দর্জিই কতটুকু জানে-
তারা তৈরি পোশাক কখন কিভাবে
        কতখানি ভিজে থাকে?

আজ বৃষ্টিও হলো! অনিচ্ছাসত্ত্বেও আপনি আরও ভিজলেন!
এখন, ভিজতে ভিজতে হঠাৎ যদি সেই দর্জিও চলে আসে
নিশ্চয়ই তাকে জিগাবেন না- ভেজা পোশাক কেন এত জাপটে ধরতে চায়?
অবশ্য দর্জিও জানবে না, পোশাকি মানুষ কি চান?
            পোশাক নিজেই কি দেয় বা নিতে চায়?

কিন্তু আপনি ভিজে গেলেন- ঘামে ও বৃষ্টিতে।

তবে সর্দি লাগার ভয়ে, তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরে
আপনি কি করবেন তাও আমরা জানি:
প্রথমে ভেজা কাপড় খুলে, তারপর শুকনো পোশাক পরবেন

সেই নতুন পোশাকের দর্জি কে? তাকে মনে পড়ে?
সেও কি আপনার দৈর্ঘ-প্রস্থ মনে রাখেনি,
        আমরাও মনে রাখতে পারিনি সব যন্ত্রণা
বা ফিরে আসবার পথের সংলাপ, একা একা

মন্দাক্রান্তার কবিতা

মন্দাক্রান্তার কবিতা শুনতে দাঁড়িয়ে, ভুবন বলল:
    ‘দ্যাখো আমরা কোথায় এসে পড়েছি!’

সত্যিই তো! কোথায় আসতে গিয়ে, কোথায় এসেছি আমরা?
কেননা দেখতে পাচ্ছি-
মন্দা একটি দিঘির ঘাটে বসে, শান-শ্যাওলায়
            কবিতা পড়ছে
আর কবিতাগুলি হাঁস হয়ে ভেসে যাচ্ছে জলে...

‘ভুবন শোন, মন্দার ভিতরে তো কবিতা আছে
        মন্দা, কবিতা পাড়ায় চলে’

অবশ্য সেই কবিতারা, হাঁস হয়ে জলে ভেসে যায়
দিনশেষে সন্ধ্যায়, ঘরে ফিরে মন্দা দ্যাখে-
ভালো লাগছে না... যেহেতু বিশেষ বয়সে
কোনও কোনও হাঁস হয়তো ঘরেই ফেরে না

ফেরে না কবিতার হাঁস...?

শেষ কবিতাটি মন্দা যখন পড়ছিল, মনে হলো:
মেয়েটি সন্ধ্যায় ঘরে না ফেরা হাঁসকে ডাকছে-
        আয় আয় চই চই, আয়
তুই না এলে, শোন, আমি কিন্তু পালক খুলে ফেলব
            রাতে, বিছানায়

মন্দার অবাধ্য ডাকে, কথোপকথনের ফাঁকে, আমি ও ভুবন
            এখনও সন্ধ্যায়
                যে কোনও দিঘির পাড়ে
                    কবিতা শুনতে দাঁড়াই

প্রতিষ্ঠান

ব্যক্তিকে বাড়িয়ে দাও তুমি এমনই প্রতিষ্ঠান

তোমার গোপনে যে গভীর জলাশয় দেখে
আমি বসে থাকি মৎস্যশিকারির সম্ভাবনায়
        মাছমন আরাধ্যের দিনে;

জাঁহাছে আঙুলগুচ্ছ, তোমার আঙুলে লেখা
রাত্রিকালীন তারাদের গল্প! গল্পপাঠ
দীর্ঘ দূরত্ব ডিঙিয়ে আমি মহাকাশ চর্চা করি

চর্চা করি বনতরুদের গান

এদিকে, আমাদের যশোপ্রার্থী তরুণ বাতাসে
            যা যা উড়ে যায়
তুমি সব কুড়িয়ে কুড়িয়ে
        কার্পাস রচনা কর!
কবিতার ধর্ম মেনে, উড্ডয়নে
        তুমি গভীর প্রতিষ্ঠান

উল্লেখ্য, ব্যক্তিত্ব বিকাশে আমি
মাছমন, মহাকাশ, তরুমর্ম জড়িয়েছি আজ চোখে;
যে কারণে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা আমাকে মানায় না

কবিতার মর্ম মেনে, উড্ডয়নে, তোমাকে বলেছি উদিত কবির
                    দগ্ধ-বিহঙ্গপনা

তুমি তখনই প্রতিষ্ঠান

Friday, August 28, 2009

চৈত্রক্রান্তি

অনন্ত চৈত্রের দিন, তুই ভালো থাক!
তুই শিখেছিস শোষণ

কিন্তু জানি আক্ষরিক
এই মাটি-কামড়ে পড়ে থাকার ছবি-
মাটি-কামড়ে পড়ে থাকাই
        যথাহরিৎ কবি!

চৈত্রে, গাছটি তো ভাই পড়ে রইলো
            ঝরা সইল
বাক্য যেমন ঝরতে ঝরতে
        ঝরাপাতা!

কাব্য লিখব? কইরে আমার
        স্বপ্নমণি... শাদা খাতা?
        শা দা  হা ও য়া র  খা তা

খাতা কি আজ পাতার সঙ্গে
        শিখেছে উড্ডিন?
তুই ভালো থাক দীর্ঘশোষণ, মুগ্ধপোষণ
        চৈত্রময়ীর দিন।

ইচ্ছা মসীহ

এখনই একটা জাহাজ আসবে, জাহাজে আসবে গল্প।
সেই গল্পের শেষটা কিন্তু শেষ না করেই শেষ!
শেষে এক নদী, তার তীরে নৌকা ভেড়াবার কিছু পূর্বেই
হঠাৎ ‘ঝপাৎ’। দেখি, ঝপাতের সঙ্গে আমি ভেসে যাচ্ছি জলে

সে জলে ভাসতে ভাসতে শেষে, ভেসে গিয়ে এক দ্বীপে
দেখেছি, ইচ্ছা কখনো পুরুষালী নয়, ইচ্ছা এমনই-
কেননা আমার অনেক মৃত্যু কাম্য ছিল না মোটেই!
কেননা আমাকে উড়তে হয়েছে আগুনের শিখা ছুঁয়ে!
কেন যে আমার ওপারে যাবার সাঁকোটাই ছিল ভাঙা!
কেন যে আমাকে শাদাপৃষ্ঠায় লিখতে হয়েছে নাম!
কেন যে আমাকে ঘামতে হয়েছে ঘুমোবার আগে একা!

সেই দ্বীপে বহু পাখি আছে, সালিম আলি কিছুই জানে না।
সেই দ্বীপে বহু রোদ আছে, যাকে পটে কেউ-ই আঁকেনি।
সেই দ্বীপে বহু রাত আছে, রাতের মর্মার্থ নিয়ে সংশয়াচ্ছন্ন কবি।
তো, সে দ্বীপে আমার দ্বীপান্তর হলে, আমি জাহাজি-প্রতীক্ষা করি:

যত যত যত চক্রব্যাধ, এতটাই অবাধ যে দেখতে না-দেখতেই
আমিভর্তি স্মারক আমার রজনীলিপির মধ্যে ঢুকে পড়ে।
যদিও, আমিও গান করেছি যদিও আমি রয়েছি জনান্তিকে
অজস্রএক টোকন ঠাকুর আমি শুধু যাই লিখে

আজ জাহাজি গল্প, সেই দ্বীপ, দিনরজনীর লিপিময় কথা, এসব কেন?

তোমার ইচ্ছা। তুমি হয়তো এমনি-এমনিই ইচ্ছা করেছিলে

আর আমায় উড়তে হয়েছে ঘুরতে হয়েছে মৃত্যু হয়েছে অনেক,
আর আমায় আপন অশ্রু হাতের তালু উল্টে মুছে
খুঁজতে হয়েছে ভিড়ের মধ্যে কোনটা প্রকৃত আমি?
        আমি তো অনেক
অথচ, তোমার ইচ্ছায় তুমি হয়তো তোমার মতোন একচ্ছত্র, একক?

সুন্দরীসম্ভবা পদাবলি

কোথায় নিয়ে এলে সুন্দরী?
সমুদ্রের নামে এক নব্য-মরুভূমি;
        যেখানে পিপাসা দীর্ঘ
            আমি মরি মরি!
ভ্রমণযাত্রায় ভুল? এখন কি করি?
শুনেছি আমার ভূমিষ্ঠ-রঙিন ভোরে
        বাতাসেরও অগোচরে
আমাকে প্রথম ডেকেছিল এক
        আবাবিল শিশুপরী!
পরীর বাচ্চা রেখে গিয়েছিল
            কালের নৌকা, তরী-
জলভ্রমণের ইচ্ছে বইছে
        সেই থেকে কবরাবরই।
কিন্তু আমার চারিত্র্য বোঝেনি
অভিভাবকের দল,
কণা বলতে, বালি বুঝিয়েছে
        কেউ বোঝায়নি জল-
ফলে এক আপাত-হরিণী
        একদিন বলল, ‘চল...’
চলতে গিয়েই
    দেখেছি সে সুন্দরী
সুন্দরী সেই পরীর বাচ্চা পরী
তবে, পরীর সঙ্গে
        কোথায় এলাম?
সমুদ্রের গল্পে পড়ছি কি শুধু
        বালিপৃষ্ঠার শিরোনাম?
এক্ষণে পিপাসা দীর্ঘ
        আমি মরি মরি!
সৌন্দর্যদীক্ষায় ভুল? এখন কি করি?
এই মরুবিদ্যালয়ে, কবিজীবনের ক্লাসে
            চিরকালীন শিক্ষয়িত্রী
                মরীচিকা সুন্দরী
তব, অধরা কিভাবে ধরি?

শুধু গান

যুদ্ধে মহত্ব থাকে? পরে টের পাই!
আমরা পড়েছি ওয়ার এন্ড পিস... আমরা
        ঘুরেছি গুয়ের্নিকায়

আহা, হা হা হাংরি কবিতাগুলো
বা দেশে দেশে চিত্রকলা, আর
        দুর্দান্ত ফিল্ম-টিল্ম, হাউ স্ট্রেঞ্জ
যুদ্ধের পরেই কিন্তু যুদ্ধ বোঝা যায়

তবু শান্তি শান্তি বলে ঘুমিয়ে পড়েছে
            যথামৃত গান;
গান আমাদের বোন, গান আমাদের ভাই
        যুদ্ধশেষে, এই সন্ধ্যায়
যতগান হারিয়েছি, ধরে ধরে
    সব লেখা যায়? না-সব
        লেখা হবে কোনও কালে?

এই তো আবার তুমি যুদ্ধে জড়ালে!

আমার ভ্রমণ আমার আয়না

আমি যেতে যেতে বলব, কী জানি আজ কার
            শুভদিন, শুভদিন!
কিছুটা পাথুরে পথ, তারপরও ভাবব
প্রতিদৃশ্যে আমি আরও হেরে যাচ্ছি, খেলাপ করছি ঋণ!

আমি যেতে যেতে... এই যেতে যেতে মানে কি?
গ্রামান্তের আবছা-রেখায় সন্ধ্যেটা কখন বসেছে!
আমি একে এড়িয়ে যাব? তক্ষণই তো
আমার মধ্যে বিবাহবার্তা এসে পৌঁছেছে...

বর হয়ে যাই মনে মনে আমি বউ দেখতে পাই
আমার বউ তো? তাই তীব্র ভাঁটফুল পছন্দ করবে, সেটাই
                    চেয়েছি, তাই না?
হ্যাঁ, খুব রাতের গন্ধ পাচ্ছি, ঝাঁঝাল রাত!
আসলে এই রাতটাই না-আমার উত্তরাধিকারে পাওয়া আয়না।

অথচ আমার মেয়ে জন্মাবার পরই একদিন আয়নাটি
            ভেঙে ফেলবে ভেবে
যেতে যেতে আমি
নির্জন নদীকেও একবার বলব:
    নদী, তুমি আয়নাটি নেবে?

বস্তুত

ইচ্ছেমতো ছুঁতে পারি, ফুল
        বাগানের
কেউ ফুটেছে টবে, কেউ
এই তো সেদিনই
    ফুটেছে মাত্র!

তবু সমুদ্রের
    ঢেউ
        হয়ে উঠলেই
আমি ছোঁব, তাতেই
    আভিজাত্য
        আর অহংকার
ফুটবে, লাভ হবে
    বাঙলা কবিতার

দায়িত্বশীলতার প্রশ্ন

ঠুনকো বাতাস এসে, যত কাণ্ড বাঁধিয়ে গেল
আমি তো বসেই ছিলাম

প্রথমে ভাঙল ঘর, ঘরে সেই গুপ্তভাষা
ইতিহাসে অনাশ্রিত চিঠি
        উদ্বৃতিহীন পুরনো বিকেল

আর কিছু অযাচিত রাত, রাত্রি বলছে-
আমাদের ভিতরে যে অন্ধকার থাকে; তাই-ই হয়তো
            ফিরে আসে প্রতিটি সূর্যাস্তে!

এবেলা ঠুনকো বাতাস
    প্রকাশ্যে জানিয়ে গেল-
ঝড়-হিসেব কাল আসব, তোকে
        হ্যাচকা উড়িয়ে নিয়ে
            ফেলে আসব শ্রীমতী পরিত্যাক্তার পাশে;
দেখি তার নৈশঘুম
        ভাঙাতে পারিস কিনা?

Thursday, August 27, 2009

কথাবার্তা বিষয়ক

আমি এত কথা বলি, স্বঘোষিত বার্তা বলি... লিখি!
হুম, তোমাদের বুকের ভেতরে শুধু ব্যাকরণ, তাই
একে বলো বাচালতা! তবে, বলো অতিরিক্ত কি কি
আমি বলি আর লিখি আর রুমাল উড়িয়ে যাই?

শহরে, বন্ধুরা জানে আমি কোন বনে বাস করি?
আমি কোন নদীতীরে আজ ভোরে শৌচ করেছি?
ভুলোবনে জন্ম নিয়ে তুলোবনে উড়ে উড়ে ধুলোবনে
ফিরে এসে একদিন, ফুলওবনে কিভাবে মরেছি?

একদিন অনুভূতি বলে এক ভিলা ছিল, ভেলা ছিল!
ভিলার সিঁড়িতে ছিল ভাব, ভেলা সেই ভাব নিয়ে
ভেসে গেছে জলোচ্ছ্বাসে... সেইদিনও অবহেলা ছিল...
আজ যদি তাই লিখি, তাই বলি রুমাল উড়িয়ে?

একে বলো বাচালতা, এরকমই শিখেছ ব্যাকরণে?
আমি তো যাবই আজ সন্ধ্যায়, নীলক্ষেতে... কথাবনে

শীতল কবিতা

ঘন বরফের স্মৃতি, দুভাবে পেয়েছি!

একবার বালকবেলায়, আর
আর একবার, তখন-
যখন, সমস্ত আগুন জড়িয়ে, দেহাস্ত্র উঁচিয়ে ধরেও
আক্রমণ ভুলে গিয়ে আমি মুগ্ধতার সঙ্গেই
        করে ফেলি মরমী আপোস

সে আপোসে পরাজয় ছিল?

শখ করে ইগলু খেতে গিয়ে, আজ আবার মনে পড়লো
ভেতরে আগুন রেখেও, বাইরে বেশ ঠাণ্ডা
আমি কি সেই বরফ হয়ে থাকছি?

অগ্নিহোত্রী, আবার কি যুদ্ধে-তীর্ণ রাত্রি আসবে না?

Wednesday, August 26, 2009

সাকরাইন

ঘুড়ি উড়ছে! ঘুড়ি উড়ছে আমাদের চিন্তার
ঘুড়ি ওড়াচ্ছেন আমার বন্ধুরা
ঘুড়ি ওড়াচ্ছি আমি

আমাদের ঘুড়িকাল... কি রে, দেখতে দেখতে যে
            আকাশের দিকে উঠে যাচ্ছে?
আমাদের চিন্তার সঙ্গে চাঁদ-তারা কি টক্কর খাবে?

চিন্তারা জট পাকিয়ে পাক খেয়ে পড়ছে!
একটি ঘুড়ি আরেকটি ঘুড়িকে পেচিয়ে ধরে
            কেটে দিতে চাইছে
ঘুড়ি-সংস্কৃতির স্বর্ণযুগ আর শেষই হচ্ছে না...?

আবার এর মধ্যেই কোনও ঘুড়িটা আরও নির্জন হতে গিয়ে
আকাশের আরও আকাশে উঠতে গিয়ে
    কি জানি কি নক্ষত্র হতে চাইছে!
কিন্তু এই সাধ তো পূর্ণ হবার নয়; কেননা মেঘ সম্পর্কে যারা
মাইল মাইল ধারণা রাখে, তারাই বলেছে:
মেঘ মহা চিন্তাখোর, রূপান্তরশীল ভিলেন! তার আস্তানা ভেদ করতে গিয়ে
ধরা খেয়ে পড়ে আছে কতজনই
            ঘুড়ির কংকাল

আজ তবু ঘুড়ি ওড়াবার দিন, আজ ঘুড়ি উড়ছে
                আমাদের চিন্তার